কলকাতা: রাত দেড়টা। নারায়ণপুর থানায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা নিজেদের মতো কাজ করছেন। থানার সামনে ইতঃস্তত ঘুরে বেরাচ্ছিলেন বছর তিরিশের যুবক। কনস্টেবলের চোখে পড়ে। তাঁকে প্রশ্ন করতেই ছেলেটা নিজেই হুড়হুড়িয়ে ঢুকে পড়েন থানার ভিতর। তারপর ‘স্যরের’ টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে একটাই লাইন বলেন। ‘মাকে খুন করে এসেছি, বডি বাড়িতে…’ হতভম্ব হয়ে পড়েন পুলিশকর্মীরা। ছেলের সব অবসাদের শিকার হলেন মা। রাগের বশে মাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন ছেলে। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণপুরের পূর্বাচলে। পুলিশ গিয়ে ঘর থেকে প্রৌঢ়ার দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম লক্ষ্মী সাঁতরা (৪৯)। তিরিশ বছর বয়সী ছেলে সোমনাথ সাঁতরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বাচল ২১ নম্বর লেনে মায়ের সঙ্গে থাকতেন সোমনাথ। তিনি সেভাবে কোনও কাজ করতেন না। অথচ বিয়ে করে নিয়েছিলেন। সংসারে অশান্তি হওয়ায় স্বামীর ঘর ছেড়ে বাবার কাছে গিয়ে থাকতে শুরু করেন সোমনাথের স্ত্রী। তারপর মা-ছেলেই বাড়িতে থাকতেন। জানা যাচ্ছে, লক্ষ্মীই একটি বেসরকারি সংস্থায় ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালাতেন।
তবুও মায়ের কাছ থেকে টাকা চাইতেন তিনি। তা নিয়েই নিত্য অশান্তি হত। যার ফলে সংসারে আর্থিক অনটনে চলছিল। সোমবারও মায়ের সঙ্গে বিবাদ হয় সোমনাথ সাঁতরার। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, অশান্তি চলাকালীনই মায়ের গলা টিপে ধরেন তিনি। তাঁর মায়ের শ্বাস আটকে যায়। এরপর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
বেশ কিছুক্ষণ ঘরেই বসে থাকেন তিনি। তারপর পোশাক বদলে সোজা চলে যান থানায়। নারায়ণপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। কর্তব্যরত পুলিশকর্তাকে সমস্ত বিষয় জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লক্ষ্মী সাঁতরার দেহ উদ্ধার করে। আপাতত দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এক প্রতিবেশী বলেন, “রাত ১টায় থানা গিয়ে বলেছে, মাকে মেরে দিয়েছে। সংসারে ঠিক কী নিয়ে অশান্তি ছিল, তা তো সেভাবে বলতে পারব না। তবে ছেলেটা সবসময়ই ফোন নিয়ে থাকত।” কেবলই কি মানসিক অবসাদ নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।