সন্দেশখালি: জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সোমবারই সন্দেশখালিতে যান। চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা কলকাতায় আসার আগে সেখানে ঘুরে এসেছিল কমিশনের একটি টিম। তবে রেখা শর্মার বক্তব্য, পুলিশের কারণে বহু নির্যাতিতার সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে পারেননি। তাই এবার চেয়ারপার্সন নিজে আসেন। এদিন সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রেখা শর্মা বলেন, এদিন ১৮টির কাছাকাছি অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। সেখানে ধর্ষণের অভিযোগ আছে ২টি, বাকি যৌন হেনস্থার অভিযোগ। যৌন হেনস্থার অভিযোগকে খুব হালকা করে নেওয়ারও যে কিছু নেই, সে কথাও জানিয়ে দেন রেখা। বলেন, দিল্লিতে রাষ্ট্রপতিকে রিপোর্ট দেবেন তিনি। তাঁর মুখে শোনা যায় রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রস্তাবও।
গত ৫ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান নামে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইডি হানা দেয়। মূলত রেশন দুর্নীতি মামলায় এই অভিযান ছিল। কিন্তু সেই ঘটনা নতুন মোড় নেয় ইডির উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এরপর সন্দেশখালি রূপ নেয় জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির।
পথে নামেন মহিলারা। শাহজাহান ও তাঁর দুই শাগরেদ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের নামে একের পর এক সাংঘাতিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। জমি দখল, পাট্টা দেওয়ার নামে কাটমানি নেওয়া, গ্রামের পুরুষদের মারধর, মেয়েদের শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থা, কোলের শিশুকে মার— তালিকায় বাদ পড়েনি কিছুই।
গ্রামের মহিলারা ঝাঁটা, বাঁশ হাতে পথে নামেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এরইমধ্যে আদিবাসী মহিলাদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে শিবু-উত্তমদের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে সন্দেশখালিকাণ্ড নতুন মোড় নেয়। ঘটনাস্থলে আসে তফসিলি কমিশন। তারাও এসে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে সওয়াল করে তারা।
এরমধ্যেই আসে জাতীয় মহিলা কমিশনের দল। তারা গ্রাম পরিদর্শন করে। বলে যায়, অভিযোগ সম্পর্কিত যা রিপোর্ট দিল্লিতে জানাচ্ছে। তারপরই শোনা যায়, সন্দেশখালি আসছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। সোমবার রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রেখা।
এদিকে সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় মামলা। আদালতের নির্দেশে যা বাতিলও হয়। পরে আবার সন্দেশখালির নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এই ধারা বলবৎ করা হয়। তা নিয়েও মামলা হয়, আদালত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশও দেয়। অন্যদিকে রাজভবনের তরফে পিস হোম খোলা হয় সেখানে। সন্দেশখালির মহিলাদের আপাত ঠিকানা হিসাবে যা ঠিক হয়।
তবে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা বলেন, “রাজভবন পিস হোম খুলেছে। কিন্তু মহিলারা নিজেদের ঘরে নিরাপত্তা চাইছেন। আমি রাজ্য সরকারকে বলব নিরাপত্তা দিতে। মঙ্গলবার আমি ডিজির সঙ্গে দেখা করব। আমার মতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া দরকার। কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আছে বলে এখনও গ্রেফতার হয়নি শাহজাহান।”
এদিকে সোমবারই নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসন প্রশাসনের মতো কাজ করছে। ওদের স্বাধীনতা দিন। ওরা ওদের মতো কাজ করছে ওরা করবে। আইন আইনের পথে চলবে। আমিও আগে বলেছি, পুলিশ কমিশনারও বলে দিয়েছে।”
সন্দেশখালি গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনকে পাশে বসিয়েই তিনি বলেন, ” সবটা দেখছি। ওখানে মহিলাদের উপর নির্যাতন হয়েছে। যা পদক্ষেপ করার, তা হবে। আর তা নির্ভীক ভাবেই। তবে এখন প্রয়োজন শান্তি আনা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়। নির্যাতিতদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।”