কলকাতা: ওয়াকফ বিল নিয়ে আগেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ওয়াকফ বিল নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা স্পষ্ট করেছেন, ওয়াকফ বিল নিয়ে সংখ্যালঘুদের পাশেই থাকছেন তিনি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। যদিও বিজেপির তরফ থেকে অবশ্য পাল্টা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে, এ রাজ্যে যে ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, তা বেদখল করে রেখেছেন তৃণমূলের নেতা বিধায়করা। আর এ নিয়ে এবার সুর চড়ালেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তিনিও বিজেপির সুরেই কথা বললেন। কিন্তু তাঁরও বক্তব্য, ওয়াকফ বিল আদতে মুসলিমদের অধিকারকে লঙ্ঘন করবে।
ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই সমাবেশ করেছেন। শুক্রবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, “আমরা প্রথম থেকে বিরোধিতা করছি এই বিলের। যৌথ সংসদীয় কমিটিতেও মেইল করেছি, বিরোধিতা করেছি। জেপিসি এখানে আসবে। আমরা কেন বিরোধিতা করছি, তার কারণ ব্যাখ্যা করতাম। কিন্তু তারিখ পিছিয়ে দিল। সেটা দুর্ভাগ্যজনক। নতুন করে কোনও তারিখ নির্ধারিত হবে বলেও মনে হচ্ছে না।”
তবে তৃণমূল ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই বিরোধিতা করছে বলে কটাক্ষ করেন নওশাদ। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল ভোট পাওয়ার জন্য তার মেকানিজমকে কাজে লাগিয়ে বড় বড় মিটিং মিছিল করছে। কিন্তু প্রতিবাদকে স্বাগত জানাই।” আইএসএফের তরফ থেকেও বিভিন্ন জায়গায় মিটিং মিছিল করা হচ্ছে, মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
নওশাদের দাবি, আসলে বিজেপি দুটি কারণে ওয়াকফ বিল আনতে চাইছে। তাঁর ব্যাখ্যা, “প্রথমে মেরুকরণের রাজনীতি। দ্বিতীয়ত, মূল্যবান সম্পত্তিগুলোকে বকলমে লুটে নেবে। এটা বিজেপি করছে।” বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাতের অভিযোগ তোলেন তিনি। আর তার উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন সিএএ-এর প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “সিএএ-এর সময়ে ক্যা ক্যা করে বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু সংসদে ভোটাভুটির সময়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছিল। নতুন পার্লামেন্ট ছিল না। নতুন পার্লামেন্টে তৃণমূল কোন দরজা দিয়ে পালাবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না, যতক্ষণ না ভোটাভুটি হচ্ছে।”
বাংলা বিধানসভায় আলোচনা রয়েছে, আইএসএফ তাদের মত রাখবে বলে জানিয়েছেন নওশাদ। তৃণমূলের প্রতিবাদ আদৌ ‘মন থেকে কিনা’, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নওশাদ। নওশাদ বলেন, “যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিবাদ মন থেকে করেন, তাহলে ২,৩ তারিখ বিধানসভায় আলোচনার সময় মমতা নিজেই তাদের দলের দু-তিন জন বিধায়ককে বলে দেবেন, তোরা এখানে আসবি না।” এক্ষেত্রে হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূমে সম্পত্তি লুঠের তত্ত্ব তাঁর কাছে আছে বলেও জানিয়ে দেন নওশাদ।
প্রসঙ্গত, ওয়াকফ বিল নিয়ে সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি তথা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বৃহস্পতিবার। বিলের বিরোধিতায় শনিবার যেখানে পথে নামতে চলেছে তৃণমূল, দলের বিধায়কই নাকি সেই সমাবেশের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। অন্তত তেমনই দাবি করেছেন। পাল্টা বৃহস্পতিবারই কর্মসূচি করে ফেললেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। ফিরহাদ হাকিমকে খোঁচা দিয়ে সিদ্দিকুল্লা বলেন, “ববি হাকিম রাজনীতিতে আমার চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু মুসলমানদের নিয়ে লড়াই আন্দোলনে আমার সংগঠনের ধারে কাছে কেউ নেই।” এই পরিস্থিতি মমতাকে তাঁরই দলের বিধায়ক নিয়ে খোঁচা দিলেন নওশাদ।