কলকাতা : শুধুমাত্র নির্মল মাজির বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগই নয়, স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ভবানী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে এসেছিল সেই চিঠি, যাতে সব অভিযোগের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। আর সেই চিঠি সামনে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁকে সরানো হল বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ভবানীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবর্তে প্রকাশ বাগচীকে কার্যনির্বাহী বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হল স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভবানীবাবু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছেন। তাই এই পদক্ষেপ। যদিও বিষয়টি এত সরল নয় বলেই মত চিকিৎসক সংগঠনগুলির।
এ দিকে, ভবানী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ তুলেছে প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েন। বুধবারই পিডিএ-র তরফ থেকে বিরুপাক্ষ বিশ্বাস একটি বিবৃতি দিয়ে জানান, প্রথমে উত্তরবঙ্গে ছিলেন ভবানী প্রসাদ। সেখানে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি। সপ্তাহে দু দিন সর্বোচ্চ দু ঘণ্টার জন্য হাসপাতালে যেতেন বলে দাবি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে বদলি হওয়ার পর, তিনি কয়েক বছরের জন্য একটি বিরতি নিয়েছিলেন, পরে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়েছিল। যেখানে তিনি আবার তার অনুপস্থিতির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন বলে অভিযোগ। নির্মল মাজির নির্দেশেই এই বিবৃতি তৈরি করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
সম্প্রতি একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। যেখানে সরাসরি রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তিনি দাবি করেন, বেশ কিছু ‘অন্যায়’ দাবি মানতে বলা হয়েছিল তাঁকে। না মানলে বদলি করে দেওয়া হবে বলেই নাকি হুমকি দেন নির্মল মাজি।
চিকিৎসকের চিঠি বয়ান অনুযায়ী, নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এমন ২০০-র বেশি স্টেন্ট পুনরায় ব্যবহারের জন্য নথিভুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল তাঁকে। হৃদযন্ত্র পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইকোডপলার বিভাগে না থাকা সত্ত্বেও, সেই যন্ত্র সম্পর্কে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। কার্ডিওলজি বিভাগে কেন যক্ষ্মা বা ডায়ারিয়ার রোগীকে ভর্তির সুপারিশ করা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি। তিনি জানিয়েছিলেন, কার্ডিওলজি বিভাগে ট্রেডমিল টেস্টের ব্যবস্থা নেই বেশ কিছুদিন ধরে, অ্যাঞ্জিওগ্রাফি স্টেন্টিংয়ের জন্যও সরঞ্জাম নেই। বিভাগে না এসেও গ্রুপ বি স্টাফদের দিয়ে চিকিৎসকেরা খাতায় সই করাচ্ছেন, এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগও জানান তিনি।
এই সব অভিযোগ নিয়ে তিনি স্বাস্থ্যভবনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। তবে তাতে কোনও সুরাহা না হওয়ায় পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বলেও ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায়। আর এবার তাঁকেই সরানো হল বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে।