কলকাতা: ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election) পরবর্তী সময়ে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে বারবারই তপ্ত হয়েছে বাংলার মাটি। দলীয় কর্মীদের খুনের অভিযোগে শাসকদল তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি (BJP)। ভোট পরবর্তী হিংসায় কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুন হন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও (Panchayat Election of 2023) হিংসার আশঙ্কা করছে স্বজনহারা পরিবারগুলি। তাই দুর্গাপুজোর মাধ্যমে মায়ের কাছে প্রার্থনা ‘আসছে বছর রক্ষা কোরো মা’। প্রার্থনা করছেন খুন হওয়া অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার। অভিজিতকে মনে রাখতেই তাঁর নামে ‘স্মৃতির পুজো’ করছেন তাঁর দাদা বিশ্বজিৎ। এ বছর এই থিমের মাধ্যমে একদিকে যেমন ভোট পরবর্তী হিংসার কালো স্মৃতিগুলো তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি মায়ের কাছে প্রার্থনা করা হবে, আগামী বছর কোনও মায়ের কোল যেন খানি না হয়। এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্বজিৎ। কারও যেন এক ফোঁটাও রক্ত না ঝরে সেই প্রার্থনাও করা হবে দুর্গার কাছে।
এদিকে প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের পুজোর অনুদান নেয় না এই পুজো। এবারও অনুদান ছাড়াই পুজো করছেন তারা। ব্যানারেও তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। থিমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মায়েদের কান্না রক্তাক্ত বাংলা’। অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “ভোট পরবর্তী মামলায় আমার ভাই সহ যেভাবে ৬০ জন বিজেপি কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে তাঁদের মায়েরা আজ কাঁদছেন। পশ্চিমবঙ্গের মাটি রক্তে ভেসে গিয়েছে। সেই চিন্তাকে সামনে রেখেই আমাদের থিম মায়েদের কান্না রক্তাক্ত বাংলা। একইসঙ্গে রয়েছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন, সেখানেও এই খুনের হোলি খেলা হতে পারে। তাই আর যাতে এ ঘটনা না ঘটে তাই মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠভাবে হয়। কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়।”
পুজোর থিম নিয়ে অভিজিৎ সরকারের বন্ধু শৌরিষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে খেলা হবের নাম করে গোটা বাংলা রক্তাক্ত হয়েছে তার জন্য আমাদের এ বারের পুজোয় এই অভিনব থিম করা হয়েছে। তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনী যেভাবে বিজেপির ৬০ জন কর্মীকে হত্যা করেছে তার প্রতিবাদেই এই থিম। কারণ সন্তান হারিয়ে ওই সমস্ত কর্মীদের মায়েরা আজ কাঁদছেন। কিছুদিন আগে বেলেঘাটাতেও এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পেটে যেভাবে লাথি মারা হয়েছে, বাচ্চাটি মরে যেতে যেতেও বেঁচে গিয়েছে। সেখানেও তাঁর মা কাঁদছে। গোটা বাংলাজুড়ে মায়েরা কাঁদছে। এই ৬০ জন বিজেপি কর্মীর মধ্যে আমার বন্ধুকে যেভাবে মারা হয়েছে তাঁর মাও কাঁদছে। এই রক্তাক্ত বাংলায় মায়েদের কান্নার কথাই আমরা তুলে ধরতে চাইছি। আমরা ভয়ের মধ্যে রয়েছি। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনেও হয়তো খেলা হবের নাম করে রক্তের হোলি খেলা হবে। তাই আর কোনও মায়ের কোল যাতে খালি না হয় সে জন্যও তাই মায়ের কাছে প্রার্থনা করছি।” যদিও এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, “ওরা যা পারছে করছে। এখন যদি পুজোর সঙ্গে ভোটকেও জুড়ে দেয় তাহলে আর কী করা যাবে। অনেক পুজোই তো হয়। অনেক জায়গাতেই আমাদের মনোভাবাপন্নব্যক্তিরা পুজো করে। এখন বিজেপি যদি এসব করে তবে আর কী করা যাবে।”