কলকাতা: দুয়ারে রেশন (Duare ) হচ্ছেই। সিঙ্গল বেঞ্চের পর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চেও স্বস্তি পেল রাজ্য সরকার। ফলে দুয়ারে রেশন কর্মসূচি হতে কার্যত আর কোনও বাধা রইল না রাজ্যে। সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ে কোনও স্থগিতাদেশ না দিয়েই আদালত জানিয়ে দিল, দুয়ারে রেশন রাজ্যে চলবে। তবে এই মামলায় রাজ্য সরকারের কাছে একটি হলফনামা তলব করেছে হাইকোর্ট। যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোন আইনের ভিত্তিতে রাজ্য দুয়ারে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করল। হলফনামা জমা দিয়ে সেই বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে রাজ্যকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প দুয়ারে সরকার। যার পাইলট প্রজেক্ট শুরু হয়েছে চলতি মাস থেকেই। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে একাধিক আপত্তি তুলে তা বাতিল করার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রেশন ডিলারদের একাংশ। মামলাকারী রেশন ডিলারদের দাবি, রাজ্য সরকারের দুয়ারে রেশন প্রকল্প কেন্দ্রীয় রেশন বণ্টন আইনের পরিপন্থী। প্রকল্পটি একাধারে খরচ সাপেক্ষ। সেই সঙ্গে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থ, যে কর্মচারী সঙ্কুলান প্রয়োজন, সেটাও অধিকাংশ রেশন ডিলারদের কাছে নেই। এই প্রকল্পের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করাও হয়নি বলে দাবি করেছেন ডিলাররা।
এখানেই শেষ নয়, মামলাকারী রেশন ডিলাররা আরও দাবি করেছেন, বাড়ি গিয়ে রেশন দেওয়া আইন বিরুদ্ধ। সেই পরিকাঠামো রেশন ডিলারদের নেই বলে দাবি মামলাকারীদের। ডিলারদের দাবি, আইন অনুযায়ী রেশন প্রাপক দোকানে এসে রেশন নেবেন, এটাই নিয়ম।
এই নিয়ে আদালতে মামলাটির শুনানি শুরু হলে রেশন ডিলারদের দাবি ধোপে টিকতে পারেনি। হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গেল বেঞ্চে মামলাটি উঠলে আদালত জানায়, রাজ্য সরকার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই গোটা রাজ্যে মানুষের দোরগোড়ায় খাবার পৌঁছে দিতে দুয়ারের রেশন নামক প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোনও আইন ভঙ্গ হয়েছে বলে আদালত মনে করছে না।
পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বলেন, “প্রয়োজনীয়তাই হল উদ্ভাবনের মূল কারণ। একটা অদৃশ্য ভাইরাস মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই বেঁচে থাকার নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করতে শিখিয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে মানুষ বাধ্য হয়েছে ঘরবন্দি থাকতে। বিভিন্ন সংস্থা মানুষের দরজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার নতুন উপায় আবিষ্কার করেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো এবিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। সরকারি বা আধা-সরকারি সংস্থাগুলিও খুব বেশি পিছিয়ে নেই।”
সিঙ্গের বেঞ্চের এই রায়ের বিরোধিতা করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন মামলাকারী ডিলাররা। সোমবার সেই মামলাটি ওঠে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি মামলাটি গ্রহণ করেন ঠিকই, কিন্তু কোনও স্থগিতাদেশ দেননি। তবে বিচারপতি বলেন, রাজ্যকে জানাতে হবে কেন এই প্রকল্পের সূচনা করা হল।