Bengal Weather Update: ২২ বছরে ‘উষ্ণতম’ নভেম্বর কলকাতায়, ঠান্ডাকেই ‘চাদর-মুড়ি’ দিয়ে রাখল কারা?

Bengal Weather Update: চলতি শতাব্দীর নভেম্বরে ২১ ডিগ্রি বা তার উপরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় পৌঁছেছে মাত্র চার বার, তার মধ্যে জ্বলজ্বল করছে সদ্যসমাপ্ত মাসটা। একে তো নানা কারণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে, তার উপর বায়ুমণ্ডলে উপরের স্তর ও মাঝারি স্তরে মেঘ ঢুকছে বারবার।

Bengal Weather Update: ২২ বছরে উষ্ণতম নভেম্বর কলকাতায়, ঠান্ডাকেই ‘চাদর-মুড়ি’ দিয়ে রাখল কারা?
কী বলছে আবহাওয়া দফতর? Image Credit source: twitter

| Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী

Nov 30, 2023 | 3:43 PM

কলকাতা: নভেম্বরের শেষ। শিয়ালদহ থেকে লাস্ট ট্রেন। অন্য বছর এই সময় হাওয়ায় বেশ শিরশিরানি থাকে। জানলার কাচ নামিয়ে, গায়ে চাদর টেনে বাড়ি ফেরেন যাত্রীরা। এ বার সে বালাই নেই। ঠান্ডাকেই কেউ যেন চাদর-মুড়ি দিয়ে রেখেছে, বেরতেই পারছে না! এক যাত্রী আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘এ বার ঠান্ডা বোধহয় আর পড়বে না!’’ পাশের জনের মন্তব্য, ‘‘শীত পড়বে কী! ঋতু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে!’’ আবহবিজ্ঞান বলে, এক বছরের ধারা দেখে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কিন্তু তেইশের নভেম্বর যে বদলের হাওয়া নিয়ে হাজির হয়েছিল, তা বিলক্ষণ জানেন আবহবিদরা। তাঁরা আগেই টের পেয়েছিলেন, তাই গোড়াতেই হাওয়া অফিস ইঙ্গিত দিয়েছিল, এ বছর সাত তাড়াতাড়ি শীত পড়ার আশা নেই, ‘গরম’ই থাকবে নভেম্বর। জনতার অভিজ্ঞতা তো বটেই, মাসের শেষে অঙ্কও বলছে, পূর্বাভাস একেবারে নিখুঁত। আবহাওয়া দফতরের তথ্য, কলকাতায় এ বছরের নভেম্বর ২২ বছরে উষ্ণতম। জেলাতেও পরিস্থিতি আলাদা নয়।

গরমকালে চর্চায় থাকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, শীতে চর্চা হয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিয়ে। আলিপুরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নভেম্বরে কলকাতায় ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। যদিও তা ১৮৮৩ সালের রেকর্ড অর্থাৎ বিশ্ব উষ্ণায়ন পূর্ববর্তী যুগের কথা। কিন্তু বর্তমান শতাব্দীতেও নভেম্বরে ১৪ ডিগ্রিতে নেমেছিল কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বেশি দিন আগে নয়, ২০১২ সালে। ১৫ ডিগ্রি বা তার নীচে নামার উদাহরণ কম নেই। অথচ, এ বছর বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমেই ১৫ ডিগ্রির নীচে পারদ নামার ঘটনা একেবারে হাতে-গোনা। যেটুকু ঠান্ডা তাও শুধু রাতে-ভোরে! দিনে একটু দৌড়-ঝাঁপ করলেই অস্বস্তির গরম। যা নভেম্বর-সুলভ নয় একেবারেই।

মোদ্দা কথা, এ বছরের নভেম্বর মোটেই পূর্বসূরিদের মান রাখতে পারেনি। উল্টে গরমের রেকর্ডে নাম লিখিয়ে ফেলেছ। ২০০১ সালে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সর্বাধিক নেমেছিল ১৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ বার পারদ নেমেছে ১৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, তার নীচে আর নামেনি। নভেম্বরে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় থাকার কথা ২০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সেই গড় দাঁড়িয়েছে ২১.৬ ডিগ্রিতে। চলতি শতাব্দীর নভেম্বরে ২১ ডিগ্রি বা তার উপরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় পৌঁছেছে মাত্র চার বার, তার মধ্যে জ্বলজ্বল করছে সদ্যসমাপ্ত মাসটা।

ঠান্ডার এমন বারোটা বাজল কী ভাবে?

বেশ কয়েকটি ‘ভিলেন’কে চিহ্নিত করেছেন আবহবিদরা। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘এই সময় বাতাস শুকনো থাকার কথা। অথচ, বাতাসে জলীয় বাষ্পের প্রাচুর্য। তাই ঠান্ডাও পড়ছে না!’’ মৌসম ভবনের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘একে তো নানা কারণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে, তার উপর বায়ুমণ্ডলে উপরের স্তর ও মাঝারি স্তরে মেঘ ঢুকছে বারবার। ফলে তাপমাত্রা কমার মতো পরিস্থিতি কখনওই তৈরি হচ্ছে না।’’

ভিলেনদের স্বরূপ দেখা যাক। এক, অতিসক্রিয় বঙ্গোপসাগর। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি বাংলাদেশে পাড়ি জমানোয় এপার বাংলা দুর্যোগের মুখে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু মেঘ ঢুকে ঠান্ডার রাস্তায় কাঁটা ছড়িয়ে দিয়েছিল। নভেম্বর শেষে আবার সাগরে নিম্নচাপ। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আগেই উপকূল আর লাগোয়া জেলার আকাশে মেঘ। দ্বিতীয় কারণ হল, দক্ষিণ ভারতের সক্রিয় বর্ষা। উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু এ বার মাঝেমধ্যে এতই শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে দক্ষিণি মেঘ ঢুকে পড়ছে বাংলার দক্ষিণেও। পুবালি বাতাসের জেরে নভেম্বরের শুরুতে বৃষ্টি পর্যন্ত হয়েছে উপকূলে। তৃতীয় কারণ, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। দিনকয়েক আগেই, শক্তিশালী পশ্চিমি ঝঞ্ঝা উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম, মধ্য ভারত জুড়ে বৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টি মানেই শুকনো বাতাসের জোগানে টান। কী দাঁড়াল? একে আমদানি কম, তার উপর সাগরের বাধা! এর পিছনে প্রশান্ত মহাসাগরের এল নিনোর ভূমিকা আছে কি না, থাকলে কতটা, খতিয়ে দেখছেন আবহবিদরা।

ডিসেম্বরে কী হবে? ঠান্ডার বঞ্চনা কি মিটবে?

অন্তত প্রথম সাত দিনের জন্য বিন্দুমাত্র ভাল খবর নেই। বৃহস্পতিবারই মৌসম ভবন জানিয়েছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে এগোবে। কিন্তু কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সমুদ্রে হোক বা স্থলভাগে ঢোকার পর, হামুন বা মিধিলির মতো মিউজাউমও বাঁক নিতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদরা। ফলে সরাসরি দুর্যোগ না হোক, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলার আকাশেও বিস্তর মেঘ ঢুকতে পারে। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে বাংলার দূরত্ব কমলেই মেঘ ঢুকবে। ফলে তাপমাত্রা এখনই নামার কোনও আশা নেই।’’ অর্থাত্‍, ঠান্ডার ‘চাদর-মুড়ি’ দশা এখনই কাটছে না।