‘এজেন্সি’-কে এড়াতে আটঘাট বেঁধেই তৃণমূলে মুকুল?

অনেকে বলেন, পিঠ বাঁচাতে শিবির বদল করেছিলেন মুকুল রায়। তাহলে তৃণমূলে ফেরার ক্ষেত্রে সেই যুক্তি কাজ করবে কী?

'এজেন্সি'-কে এড়াতে আটঘাট বেঁধেই তৃণমূলে মুকুল?
তৃণমূল ভবনে মুকুল রায় (ছবি- পিটিআই)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 11, 2021 | 10:52 PM

কলকাতা: এক মহাপঞ্চমীর সকালে রাজ্য রাজনীতির এক পালা বদল দেখেছিল বাংলা। গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন সেকেন্ড ইন কমান্ড। এমন বড়সড় উইকেট পতনে কী প্রতিক্রিয়া ছিল তৃণমূলের? অনেকেই বলেছিলেন সারদা-নারদেয় অভিযুক্ত মুকুল রায় পিঠ বাঁচাতে পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েছেন। মাঝে সাড়ে তিন বছর কেটেছে। সারদা-নারদের প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসেছে বিভিন্ন সময়। এমনকি সাম্প্রতিককালে ফিরহাদ হাকিমদের নারদা-কাণ্ডে গ্রেফতারির পরও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মুকুল-শুভেন্দুকে ডাকা হল না কেন? ১১ জুন সকালে আরও একটা পালা বদল। ঘাসফুলে ফুটল মুকুল। আবারও প্রশ্ন আসছে, সারদা-নারদার কী হবে?

সাধারণ হিসেব বলে, পিঠ বাঁচাতেই যদি মুকুল বিজেপিতে গিয়ে থাকেন, তাহলে তৃণমূলে ফিরলে আবারও তাঁর গায়ে ‘হাত’ পড়বে। ফিরহাদ, সুব্রত, মদনের মতো মুকুলের ছবিও দেখা গিয়েছিল ম্যাথু স্যামুয়েলের স্টিং অপারেশনে। কিন্তু বিজেপিতে যাওয়ার পর সেই বিষয়টা নিয়ে আর খুব বেশি নাড়াচাড়া হয়নি। বিজেপিই তাঁকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে, এমন যুক্তি শোনা যাচ্ছিল বিভিন্ন মহলে। সেই যুক্তিতে তৃণমূলে ফিরলে ওই মামলায় তাঁর নাম নতুন করে উঠে আসার কথা। বাংলার রাজনীতির ‘চাণক্য’ যাঁকে বলা হয়, তিনি কি সত্যিই আগু-পিছু না ভেবে পা ফেলবেন?

রাজনৈতিক মহলের মতে, নারদ মামলায় মুকুলকে যদি জড়ানো হয়, তাহলে পাল্টা চাপে পড়তে পারে গেরুয়া শিবির। সিবিআই এই মামলায় কখনও তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার কোনও অনুমোদনই চায়নি। ফলে, চার্জশিটে নাম ওঠেনি মুকুলের। কারণ সিবিআইয়ের দাবি, মুকুলের বিরুদ্ধে নারদ কাণ্ডে টাকা নেওয়ার এখনও যথেষ্ট প্রমাণ নেই। মুকুল নিজেও বারবার দাবি করেছেন, তাঁকে কখনও ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা যায়নি। সুতরাং, নতুন  করে চার্জশিটে মুকুলের নাম কখনও ওঠে, তাহলে মুকুলের স্বপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি থেকে যাবে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, সে ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি দেবেন, যথেষ্ট প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও নিছক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, মুকুল রায়ের দিকে আঙুল উঠলে আঙুল উঠবে শুভেন্দু অধিকারীর দিকেও। গত কয়েকদিনে এই ছবিটা স্পষ্ট, শুভেন্দু এই  মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির অন্যতম তাস। তাঁকেই সামনে রেখে আগামিদিনে লড়াই হবে। যে ভাবে মোদী, অমিত শাহদের সঙ্গে পরপর বৈঠক করলেন তিনি, তাতে তাঁর অবস্থান বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারও। নারদেয় অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম এই শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে নারদের স্টিং অপারেশনে দেখা গিয়েছিল। মুকুলের গায়ে হাত পড়লে প্রশ্ন উঠবেই ‘শুভেন্দু নয় কেন?’ আর সে ক্ষেত্রে বাড়তে পারে গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তিও। তাই সে দিক থেকেও কিছুটা নিশ্চিন্ত মুকুল। এ সব মামলায় আদতে কী হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে এই বিষয়গুলো ভাবনা-চিন্তা করে তবেই পুরনো দলে ফিরেছেন ‘চাণক্য’।

আরও পড়ুন: বিজেপি থেকে ‘ঝরছে’ মুকুল, অথচ আভাসই পেলেন না ‘জুটি’ কৈলাস

উল্লেখ্য ২০১৯-এ নারদ মামলায় তাঁকে তলব করেছিল সিবিআই। নিজাম প্যালেসে জেরাও করা হয়েছিল তাঁকে। আর ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি, সারদাকাণ্ডে মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। ওই ঘটনার পর থেকেই মুকুলের খসে পড়া শুরু।এ দিন তৃণমূল ভবনেও উঠে আসে সারদা-নারদ প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, বিজেপিতে থাকাকালীন এজেন্সির ভয় দেখানো হচ্ছিল মুকুলকে। ‘এজেন্সিগুলো বিজেপি মুখপাত্র’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।