কলকাতা: কাঁচা হাতে কেমো! স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত দুই মহিলাকে কেমো দিতে গিয়ে হাতের মাংস পেশি গলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ। কাঠগড়ায় NRS হাসপাতাল। শিরার বদলে মাংস পেশিতে কেমো দেওয়ায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে দুই মহিলার হাত। ভয়ঙ্কর অভিযোগ। আরও বড় অভিযোগ, শিক্ষানবিশ স্বাস্থ্য কর্মীদের দিয়ে কেমো দেওয়া হয়েছে। ঘটনা আসলে তিন মাস আগের। ১৭ মার্চ নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেজিওলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন টিটাগড়ের বাসিন্দা সাবিনা খাতুন ও কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা গীতা বিশ্বাস ভর্তি হয়েছিলেন। অভিযোগ, তাঁদেরই শিরার জায়গায় মাংসপেশিতে কেমো দেওয়া হয়েছে।
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী গীতা বিশ্বাসের কথায়, “হাতে চ্যানেল করেছিল। কেমো শিরায় না গিয়ে মাংস পেশিতে চলে যায়। হাত একদম পচে গিয়েছে। পচে মাংস বেরিয়ে গিয়েছে। এখন শুধু হাড় দেখা যাচ্ছে। আর অসহ্য যন্ত্রণা।” তাঁর আরও আফসোস, এত বড় ভুল করল হাসপাতাল, অথচ কোনও সাহায্য করল না চিকিৎসার। তিনি অভিযোগ করেন, যাঁরা শিখছেন, তাঁদেরকে দিয়েই চ্যানেল করিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “আমি যখন আর ব্যথা সহ্য করতে পারছি না, ডাক্তারবাবুকে ডাকছি, তখন হঠাৎই চ্যানেল খুলে দেয়। আর একটা বড় ইঞ্জেকশন নিয়ে এসে ফুটিয়ে ফুটিয়ে দেখছে। আমরা যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি।” আরও বড় কথা বলেছেন রোগী। তিনি বলেন, “ডাক্তারবাবু নিজেই ওঁদের বলছেন আমাদের সামনে, এর পরিণতি কী হবে জানিস, মাংস পচে যাবে। ওঁরা নিজেরা কথা বলছিলেন। আমরা সব শুনতে পারছিলাম।”
কিন্তু এর বিচার কোথায়? কার কাছে বিচার চাইবেন? উত্তর অজানা ওই মহিলার স্বামীর কাছেও। নিজের স্ত্রীকে এই অবস্থায় দেখে রীতিমতো কথা বলার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছেন দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের কর্তা। তিনি বলছেন, “ক্ষতিপূরণ কার কাছে চাইছেন, আর কেই বা দেবেন? সুবিচার তো সবাই চায়। আমরাও চাই। কিন্তু কে করবে এর সুবিচার?”
অসম্ভব অসহায় মানুষগুলো। এখন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। যদি কোনওমতে হাতের হাড় ঢাকা সম্ভব হয় তাঁদের।
এ বিষয়ে অবশ্য এনআরএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁরা দিতেও চান না। অভিযোগ উঠছে, আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের মত, “এই ঘটনা আরও প্রকট করে সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থাকে। যাঁরা যে কাজে পারদর্শী, তাঁরা না করে, যিনি পারেন না, তাঁকে দিয়ে করাতে গেলে তো এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা একাধিকবার ঘটবে। এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
তৃণমূল সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, “মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষানবিশ বলে কেউ হন না। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি। তাঁরা যে কেমো দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ এটা তাঁদের কারিকুলামের মধ্যে পড়ে। বাকি যে অভিযোগ উঠছে, তা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।