কলকাতা: ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজ্যের। পরিস্থিতির উপর সজাগ দৃষ্টি রাখছে প্রশাসন। কলকাতা পুরনিগমের তরফ থেকেও শহরে ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু তবু ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ কমছে না। বুধবার কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত প্রৌঢ়ের নাম সুব্রত সরকার। বয়স ৬১ বছর। বাড়ি কলকাতা পুরনিগমের ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশদ্রোনীতে নিউ গভর্নমেন্ট কলোনিতে। জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে অসুস্থ ছিলেন তিনি। জ্বরে ভুগছিলেন। বার বার জ্বর আসা-যাওয়া করছিল। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। রবিবার বুকে ব্যাথা অনুভব করেন তিনি। বাড়িতে বাথরুমে যেতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন প্রৌঢ়। এরপর আর দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাড়িতেই চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। সুব্রত বাবুকে দেখে চিকিৎসক অনুমান করেন, তাঁর ডেঙ্গি হয়েছে। পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলেও সন্দেহ করেন ওই চিকিৎসক।
এরপর প্রৌঢ়কে তড়িঘড়ি আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁর ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো হয় এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে। প্লেটলেট পরীক্ষা করে দেখা যায়, তা এক লাখের কিছু বেশি রয়েছে। কিন্তু সোমবার আবার প্লেটলেট কমে ২৫ হাজারে নেমে এসেছিল। যদিও সেই সময় তাঁর শরীরে জ্বর ছিল না বলেই জানা গিয়েছে। ওই বেসরকারি হাসপাতালের থেকে প্রৌঢ়র ছেলেকে জানানো হয়, হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন তাঁর আরও একবার হার্ট অ্যাটাক এসেছিল। এরপর মঙ্গলবার থেকে সুব্রত বাবুর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে। চিকিৎসকরা পরিবারের লোককে বি পজিটিভ গ্রুপের রক্তের ব্যবস্থা করার জন্য বলেছিলেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাহায্যে সেই রক্তের ব্যবস্থা করেছিলেন সুব্রত বাবুর পরিবারের লোকেরা। কিন্তু তাঁকে শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
বুধবার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত সুব্রত সরকারের বাড়ির সামনে গিয়ে যে চিত্র দেখা গেল, তা স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট উদ্বেগের। সুব্রত বাবুর বাড়ির উল্টো দিকের একটি বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই জমা জল। আর সেই জমা জলের মধ্যে আবর্জনা ভাসছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পরিত্যক্ত পাত্রের মধ্যেও জল জমে রয়েছে, এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত এলাকাবাসীরাও। স্থানীয়দের একাংশ আশঙ্কার সুরে বলেন, “এখানে ভয়ঙ্কর মশার উপদ্রব। আর তাতেই একাধিক রোগ দেখা দিচ্ছে।”
এই বিষয়ে কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কলকাতায় এবার এক অদ্ভুত আবহাওয়া। বৃষ্টি কম, কিন্তু মশা বাহিত রোগ বেশি। মানুষের সচেতনতার একটা অভাব রয়েছে, বারবার বলেও কাজ হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমে এবং পুরনিগমের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে। তবুও সচেতনতার অভাব। সব মানুষের মধ্যে যখন সচেতনতা এসে যাবে, তখন একটাও ডেঙ্গি হবে না, একটাও মৃত্যু হবে না।”