কলকাতা : ৪৮ ঘণ্টার নাটকের পর বাতিল হয়ে গেল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বদলের নির্দেশ। মেডিক্যাল কলেজে গিয়েও অধ্যক্ষের ঘরে প্রবেশ করতে পারেননি নতুন অধ্যক্ষ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় হাসপাতালে। শুক্রবার সকালে নির্দেশ মেনে স্বাস্থ্য ভবনেও যান তিনি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও বড় চমক। অধ্যক্ষের বদলির নির্দেশই বাতিল করে দিল স্বাস্থ্য ভবন। একগুচ্ছ অভিযোগের ভিত্তিতেই অধ্যক্ষের বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদল হওয়ায় হতবাক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। আরও একবার কার্যত প্রমাণ হয়ে গেল, নির্দেশিকার মান রক্ষা করতেই ব্যর্থ স্বাস্থ্য ভবন। এই ঘটনার পিছনে কারণ হিসেবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাও বলছেন অনেকে।
আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে সন্দীপ ঘোষকে সম্প্রতি বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। মেডিক্যাল বর্জ্য পাচার সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। চিকিৎসক সনৎ ঘোষকে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরই নাটকের সূত্রপাত। হাসপাতাল ছাড়ার আগে ঘর চাবি দিয়ে চলে যান সন্দীপ ঘোষ। হাসপাতালে পৌঁছলেও সেই ঘরে প্রবেশ করতে পারেননি নয়া অধ্যক্ষ। এমএসভিপি ছুটিতে, তাই তাঁর কাছেও যেতে পারেননি সনৎ ঘোষ।
শুক্রবার সকালে পরিস্থিতি একই থাকায়, হাসপাতালে গিয়ে সার্জারি বিভাগে কাজ করেন সনৎ ঘোষ। তারপর স্বাস্থ্য ভবনে ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। এরপরই জানা যায়, অর্ডার বাতিল হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তিনি আর অধ্যক্ষ নন।
এই সিদ্ধান্ত যে চিকিৎসক মহলে খুব একটা ভাল বার্তা দিচ্ছে না, তেমনটাই মনে করছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, এরপর থেকে তো কোনও সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ না হলে তাঁরা তালা ঝুলিয়ে চলে যাবেন! সরকারি চিকিৎসকেরাও এই ঘটনায় অবাক।
সনৎ ঘোষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। স্বাস্থ্য ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, “অর্ডার ক্যানসেল হয়ে গিয়েছে। আমি আবার আগের স্টেটাসে ফিরে গেলাম। উলুবেড়িয়ায় ফিরে যাচ্ছি।”
অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠছে সন্দীপ ঘোষের পিছনে কাদের মদত আছে। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই কি প্রকাশ্যে চলে আসছে? সূত্রের খবর, শাসকদলের নেতা তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন ও নির্মল মাজিদের অভিযোগের ভিত্তিতেই বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ফের কেন নির্দেশ বাতিল হল। তৃণমূলের অপর গোষ্ঠী অর্থাৎ সুশান্ত রায়ের গোষ্ঠীর অঙ্গুলিহেলনে কি সেই নির্দেশই বাতিল হল? গুঞ্জন শুরু হয়েছে চিকিৎসক মহলে।
এই ঘটনাকে ‘ছেলেখেলা’ বলে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। বিজেপি মুখপাত্র সন্ময় বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, “এটা কি ছেলেখেলা হচ্ছে? একজন সিনিয়র ডাক্তার। তাঁকে অপদস্থ করার কী দরকার ছিল? এতে কী বার্তা যাচ্ছে? এরপর কেউ চিকিৎসক হতে চাইবেন না।” চিকিৎসকদের সংগঠনের সঙ্গে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গুলিয়ে ফেললে চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় পাল। তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিভাগ উত্তর দিতে পারবেন।”