কলকাতা: ঘরটা এক্কেবারে পরিপাটি। দেওয়ালে তাঁর ছবি,ঘরের টেবিলে চায়ের কাপ, টেডি বিয়ার, বাহারি রঙের আলো। ১১ ঘণ্টা আগেও বন্ধুদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি। তারপর কী এমন হল? সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী দে’র রহস্যমৃত্যুতে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। ছুটির সকালে গড়ফা গাঙ্গুলিপুকুরের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় অভিনেত্রীর ঝুলন্ত দেহ। তাঁর মৃত্য়ু ঘিরে তৈরি ধোঁয়াশা। পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে পল্লবীকে। তাঁদের বাড়ির মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না বলে দাবি পরিবারের। প্রাথমিকভাবে পুলিশি তদন্তে সম্পর্কে টানাপোড়েনের বিষয়টি উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, গত এক বছর ধরে সাগ্নিক নামে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। সেই সম্পর্কে ইদানীং জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। দাবি পল্লবীরই সহকর্মী সায়কের। ইতিমধ্যেই প্রেমিক সাগ্নিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাঁর ফোনকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পল্লবীর বাবা সরাসরি বলছেন, “আমার মনে হচ্ছে সাগ্নিকই সব কিছু জানে। ওই আমাদের ফোন করে সব কিছু জানিয়েছিল প্রথম। আমরা তো তখনও কিছুই জানতাম না।” জানা যাচ্ছে গাঙ্গুলিপুকুরের ফ্ল্য়াটে দীর্ঘদিন ধরে একাই থাকতেন পল্লবী। তবে পরিবারের সদস্যদের যাতায়াত ছিল ফ্ল্য়াটে। পল্লবীর বাবার দাবি, রবিবার সকালে বিষয়টি সাগ্নিকই তাঁদের জানিয়েছিলেন।
জানা যাচ্ছে, শনিবারও একটি সিরিয়ালের শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন পল্লবী। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, ভোর রাতের দিকেও অ্যাক্টিভ ছিলেন তিনি। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ মেয়ের দেহ উদ্ধারের খবর পান পরিবারের সদস্যরা। সেই খবর জানিয়েছিলেন সাগ্নিকই। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে মাঝের সময়টায় কী এমন হল? রাতেও পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন পল্লবী।
হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা পল্লবী বছর খানেক ধরে গড়ফার ফ্ল্যাটে সাগ্নিকের লিভ ইন করতেন। তবে কিছুদিন ধরে পল্লবীর ব্য়ক্তিগত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল বলে দাবি সহকর্মীদের একাংশের। পল্লবী প্রাণবন্ত ছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকতেন। দুদিন আগেও বন্ধুদের সঙ্গে শপিং মলে গিয়েছিলেন তিনি। সহকর্মী সায়কের বক্তব্য, “দুদিন আগেও ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওর বার্থ দে একসঙ্গে সেলিব্রেট করেছি। ও যেরকম মেয়ে, এরকম করতে পারে না। দু মাস আগে ওর জন্মদিন ছিল। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ওর নিশ্চয় কিছু সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু এটা তো এখনই ঠিক হবে না। ও খুবই ভালো মেয়ে।”
সাগ্নিক ছাড়াও আগে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পল্লবী। কিন্তু তাঁর সহকর্মীদের কথায়, পল্লবীর এই সম্পর্কের গভীরতা অনেক বেশি ছিল। অভিনেত্রীর মৃত্যুর পরতে পরতে রহস্য দানা বেঁধেছে। সূত্র এক জোট করে সেগুলি সমাধানের চেষ্টায় তদন্তকারীরা। আপাতত সাগ্নিকের থেকেই পল্লবীর সম্পর্কের সমীকরণ বোঝার চেষ্টা করছেন তাঁরা।