কলকাতা: অভিনেত্রী পল্লবী দে’র মৃত্যু তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে পুলিশের হাতে। পল্লবী ও সাগ্নিকের দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। দুটিই বেসরকারি ব্যাঙ্কে। ওই দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পল্লবী ও সাগ্নিকের আর্থিক লেনদেনের নথি চেয়েছেন গড়ফা থানার পুলিশ। খোঁজ করা শুরু হয়েছে সাগ্নিকের নথিরও। এমনকি পল্লবীর পরিবারের পরিচারিকাকেও ফের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। পরিচারিকা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি পল্লবীকে ফোন করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, কাজে আসবেন না। তা নিয়ে খুব রেগে যান পল্লবী। কারণ তাঁর হাওড়ার বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। পরিচারিকা না আসায় তিনি যেতে পারবেন না বলে খুব বকাবকি করেন।
পল্লবীর পরিবার জানিয়েছে, তিনি না থাকলে মাঝেমধ্যেই ঐন্দ্রিলা সাগ্নিকের সঙ্গে দেখা করতে সেই বাড়িতে আসতেন। এ বিষয়ে পরিচারিকার থেকে জানতে চাইবে পুলিশ। পরিচারিকা আরও জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই পল্লবী সাগ্নিকের মধ্যে ঝগড়া হত। তবে তাঁদের সম্পর্ক খুব একটা খারাপ ছিল বলে তাঁর মনে হয়নি। সবসময় এক সঙ্গে তাঁরা বাইরে যেতেন। খেতে যেতেন। পার্টি করতে যেতেন।
সাগ্নিক চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে এনেছিলেন পল্লবীর বাবা। অভিযোগের ভিত্তিতে সাগ্নিককে দীর্ঘক্ষণ জেরাও করা হয় গড়ফা থানায়। রাতে গ্রেফতার করা হয় সাগ্নিককে। সূত্রের খবর, আর্থিক তছরুপ সংক্রান্ত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সাগ্নিককে।
পল্লবীর বাবা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, মেয়ে সাগ্নিককে ২২ লক্ষ টাকা দিয়ে অডি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। সেই গাড়ি চেপেই ঘুরে বেড়াতেন সাগ্নিক। কলসেন্টারের কাজ করেন তিনি। সাগ্নিকের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাসে ১৮-১৯ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেন তিনি। কিন্তু অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাঁর খরচের বেশিরভাগটাই বহন করতেন পল্লবী।
সম্প্রতি সাগ্নিককে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে দিয়েছিলেন পল্লবী। তিনটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট করেছিলেন এক সঙ্গে। তার থেকে বেশিরভাগ খরচ করতেন সাগ্নিক। জন্মদিনে দেড় লক্ষ টাকার ল্যাপটপ সাগ্নিককে উপহারও দিয়েছিলেন পল্লবী। অভিনেত্রীর পরিবারের দাবি, এরপরও সাগ্নিক ঐন্দ্রিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছিলেন।
অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, ইদানীং পল্লবী যখন শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন, ফাঁকা ফ্ল্যাটে সাগ্নিকের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন ঐন্দ্রিলা। সেটা জানতেও পেরেছিলেন পল্লবী। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে সাগ্নিকের ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারেননি পল্লবী। অশান্তি হত প্রায়। এদিকে বান্ধবী ঐন্দ্রিলাকেও ভালবাসতেন পল্লবী। বান্ধবীর সঙ্গে প্রেমিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাঁর বন্ধুত্বেও কি প্রভাব ফেলছিল? প্রশ্ন উঠছে সেটাও। মেয়ের মৃত্যুর জন্য ঐন্দ্রিলা ও সাগ্নিককেই দায়ী করেছেন পল্লবীর বাবা। তাঁর অভিযোগ, পল্লবীকে খুন করা হয়েছে। পরিচারিকার বয়ানেও ঠিক তেমনই তথ্য উঠে আসছে। যদিও ঐন্দ্রিলার বক্তব্য, পল্লবীর মাধ্যমেই সাগ্নিকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। কিন্ত সে অর্থে মেলামেশা ছিল না। ওঁদের ফ্ল্যাটে তিনি কোনওদিন যাননি বলেও দাবি করেছেন। মাঝে মধ্যে পল্লবীর সঙ্গে ফোনে কথা হত। ঐন্দ্রিলার বক্তব্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।