কলকাতা : রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। তাও আবার খাস কলকাতায়। সোমবার থেকে ধরে শহর কলকাতার সাতটি ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘুরেও সদ্যোজাতের জন্য জোগাড় করা গেল না ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত। এনআরএসে দিন পাঁচেক আগেই এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ভাঙড়ের বাসিন্দা সীমা পাল। জন্মের পর সদ্যোজাতের দেহে বিলুরুবিনের মাত্রা ১৭ হয়ে যায়। সোমবার চিকিৎসকেরা জানান, জরুরি ভিত্তিতে সদ্যোজাতের জন্য ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন। সোমবার বিকেল পাঁচটে থেকে রিক্যুইজিশন হাতে এনআরএস, সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, এসএসকেএম, আরজিকর-সহ আরও তিনটি বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘোরেন সদ্যোজাতের বাবা বাপন পাল। কিন্তু কোথাও মেলেনি রক্ত। শেষে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার বিকেলে ওই শিশুর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, সোমবার থেকেই প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে কাটছিল সদ্যোজাতের পরিবারের। রক্তের জন্য সোমবার মধ্যরাতে একজন রক্তদাতাও জোগাড় করেছিল সদ্যোজাতের পরিজন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রক্তদাতা জোগাড় করে মঙ্গলবার বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পাওয়ার আশ্বাস মিলেছিল। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। একরত্তি শিশুর জন্য শহরের এতগুলি সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘুরেও ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত পাওয়া গেল না! দাতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে কেন সদ্যোজাতের পরিজনকে ছুটতে হল?
এই বিষয়ে রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য অচিন্ত্য লাহা জানিয়েছেন, “কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্লাড ব্যাঙ্ককেই রক্ত জোগাড় করে দিতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা রয়েছে। নামে ২৪ ঘণ্টার রক্ত পরিষেবা হলেও ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও লাভ হয়নি।”
এদিকে রক্ত সঙ্কট না থাকা সত্ত্বেও এনআরএসের সদ্যোজাতের পরিবার কেন ‘ও’ নেগেটিভ রক্তের জন্য ২৭ ঘণ্টা ধরে হন্যে হয়ে ঘুরতে হল তা খোঁজ নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভবনের গুঁতো খেয়ে এনআরএসে চিকিৎসাধীন সদ্যোজাতের মায়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন মানিকতলা সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি দল। রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে কি না, কীভাবে সদ্যোজাতের পরিবার হয়রানির শিকার হল তা জানতে চাওয়া হয়। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শুধু ওই সদ্যোজাতই নয়, ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আরও দুই শিশুরও রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।