কলকাতা: মাঝেরহাটের উড়ালপুল বিপর্যয়ের ভয়াবহ স্মৃতি তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। চোখের সামনে, টিভির পর্দায় দেখেছিলেন অনেকগুলো মৃত্যু। সেই আতঙ্ক তাঁর মনে গেঁথে বসেছিল। ভয়ে ছেড়েছিলেন কাজ। খুব একটা রাস্তাঘাটেও বেরোতেন না তিনি। একপ্রকার মানসিক অবসাদেই ভুগছিলেন। সঙ্গে ছিল ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনও। দু’বার বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু একটা বিয়েও টেকেনি। ভরসা ছিলেন বন্ধুরাই। বন্ধুরা তাঁর বাড়িতে আসতেন, দেখা করতেন। হঠাৎ চার-পাঁচদিন তাঁরাও আসেননি। তার মাঝেই বিপর্যয়। দু’দিন ধরে প্রকট গন্ধ পাচ্ছিলেন এলাকাবাসীরা। তার উৎস সন্ধানেই সামনে এল ভয়ঙ্কর ঘটনা। বাড়ির দোতলার ঘর থেকে উদ্ধার হল প্রৌঢ়ের পচাগলা দেহ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পর্ণশ্রীতে। মৃতের নাম সুজয় চক্রবর্তী (৫০)।
স্থানীয় ও বন্ধুদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, সুজয় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। যেদিন মাঝেরহাটের উড়ালপুল বিপর্যয় হয়, সেদিন তিনি রাস্তায় ছিলেন। মৃত্যু চোখের সামনে দেখে একপ্রকার অবসাদে চলে যান তিনি। বেশ কিছু দিন তাঁর চিকিৎসাও হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আগে ভাল চাকরিও করতেন সুজয়। পরে সেই চাকরি ছেড়ে দেন। একাধিকবার চাকরি পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু কোনও চাকরিই বেশিদিন করেননি। তারপর থেকে বাড়িতেই থাকতেন তিনি। জমানো টাকায় খাওয়াদাওয়া করতেন। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, প্রথমবার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কয়েকবছর পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সেই বিয়েও টেকেনি।
ভয়ে খুব একটা রাস্তায় বেরোতেন না সুজয়। মাস ছয়েক আগে তাঁর বাবার মৃত্য়ু হয়। তারপর থেকে বাড়িতে একাই থাকতেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কয়েকজন আসতেন। তাঁরা সুজয়ের পুরনো বন্ধু।
বন্ধুরা জানাচ্ছেন, তাঁদেরকে সুজয় বলেছিলেন, বাড়িতে আসতে। চার পাঁচ দিন তাঁরা আসেননি। এরই মধ্যে পাড়ার ছেলেরা তিন চার দিন ধরে সুজয়কে রাস্তাতেও দেখতে পাননি। ফলে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় পাড়ার ছেলেরা ডাকাডাকি করা শুরু করেন। সাড়া না পাওয়ায় লালবাজারে ফোন করে বিষয়টি জানান তাঁরা। তারপর পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।