কলকাতা: সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে ফ্লুইডের গুণমান। ছানিকাণ্ডেও আতস কাচের তলায় অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ওষুধ। মেটিয়াবুরুজের হাসপাতালের ঘটনা ব্যতিক্রম নয় বলেই মনে করছে অনেকে। গত ছ’মাস ধরে একাধিক মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ফ্লুইডের গুণমান নিয়ে সরব হয়েছে। গত ২৫ জুন এনআরএসে ফ্লুইডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় অর্থো-ওটিতে স্থগিত রয়েছে রোগীদের অস্ত্রোপচার। আর ওই একইদিনে মেটিয়াবুরুজের হাসপাতালে ঘটে ছানিকাণ্ড।
সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই এই ফ্লুইড নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যেটা হয়, রিঙ্গার ল্যাকটেট, নর্মাল স্যালাইন ব্যবহারের পর রোগীদের কাঁপুনি শুরু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই সঙ্গে বাড়ে দেহের তাপমাত্রা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘রাইগর’। আইভি ফ্লুইড ব্যবহারের পর রোগীর কাঁপুনির অভিযোগ এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল-সহ জেলার একাধিক হাসপাতাল থেকেও। অভিযোগের জেরে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরের তরফ থেকে যে সকল BATCH’এর ফ্লুইড নিয়ে অভিযোগ সেগুলিকে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এনএবিএল, রাজ্য ড্রাগ রিসার্চ ল্যাবরেটরি, পূর্ব ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় নমুনা। সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় ক্লিনচিট পেলেও রিঙ্গার ল্যাকটেটের ব্যবহারে রোগীর কাঁপুনির ঘটনা এখনও ঘটে চলেছে বলেই খবর। ২৫ জুন এনআরএসের অর্থো-ওটি’র ঘটনা তারই প্রমাণ মনে করছেন অনেকে।
স্বাস্থ্য ভবনের খবর, একটি নির্দিষ্ট সংস্থার ফ্লুইডের গুণমান নিয়েই যাবতীয় অভিযোগ উঠছে। যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশে চোপড়ার প্ল্যান্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। ফ্লুইডের ব্যবহারে রোগীর কাঁপুনি ভাল লক্ষ্মণ নয়, বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। যদিও স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্য, অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উদ্বেগের কিছু নেই।
মেটিয়াবুরুজকাণ্ডে প্রাথমিক যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে সন্দেহ করা হচ্ছে, ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে থাকতে পারে। আর তা হতে পারে ফ্লুইডের জন্য। চোখের ক্ষেত্রে এই ফ্লুইডের বোতল একটা ঝুঁকির জায়গা মানছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গৌতম ভাদুড়ি বলেন, “ফ্লুইডের বোতল থেকে ফ্লুইড নিয়েই ছানি অপারেশন করা হয়। সে সময় পরিষ্কার করা, ছানি বার করাতে জলের একটা বড় ভূমিকা থাকে। সেই জল যদি স্বচ্ছ না থাকে, তাতে যদি ছত্রাক থাকে, এটা যে ডাক্তার অপারেশন করছেন তার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। কারণ এটা সিলড বোতলে আসে।”
অন্যদিকে মাইক্রোবায়োলজিস্ট অঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “কিছু কিছু ফ্লুইডে চিনি থাকে। গ্লুকোজ কিন্তু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফ্লুইড ম্যানুফ্যাকচারের পর স্টেরিলাইজ করতে হয়। গামা রে দিয়ে তা করতে হয়, যেহেতু একসঙ্গে একটা ব্যাচে প্রচুর তৈরি হয়। আর তা হলে ছত্রাক মরবেই। তারপরও আমরা একটা বা দু’টো ফ্লুইড স্যাম্পেলিং করে নিই। মাইক্রোবায়োলজিকাল কালচার করে নিই। তা পাশ করলেই ব্যাচটাকে রোগীর ব্যবহারে অনুমোদন দিই। কিন্তু স্যাম্পেলিং করি ১টা বা ২টো, কিন্তু আসে ১০০ বা ২০০টা। হতে পারে আমরা যেটা নিলাম ঠিক আছে।”