আজকের সমাজে দাঁড়িয়ে নিজেকে ‘কুল’ প্রমাণ করা যুবক-যুবতীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। নিজেদের প্রমাণ করতে সমস্ত সীমা পার করে যাচ্ছে তারা। আর এই নিজেকে কুল প্রমাণের চেষ্টাতেই বিগত কয়েক বছরে বেড়েছে মদ্যপান। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সদ্য যৌবনে পা রাখা যুবক-যুবতীরা মদ্যপানকে তাদের জীবনযাত্রার অংশ করে নিয়েছে। কিন্তু কেন এত বাড়ছে মদ্যপান? সম্প্রতিই একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এর অন্যতম কারণগুলি। বেঙ্গালুরুর ক্রাইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকো-অঙ্কোলজির ফাইনাল বর্ষের পড়ুয়া সোমদত্তা ঘোষ (Somdutta Ghosh) “পারসুয়েডিং ফ্যাক্টরস দ্যাট কন্ট্রিবিউট টু দ্য ড্রিঙ্কিং বিহেভিয়রস অ্যামঙ্গ ইয়ং অ্যাডাল্টস ইন ইন্ডিয়া” (Persuading Factors that Contribute to the drinking
behaviors among young adults in India) শীর্ষক পত্রে ভারতের যুবসমাজের মদের নেশায় আসক্ত হওয়া ও তার কারণগুলি তুলে ধরেছেন।
১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের (পুরুষ ও মহিলা) মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, আজীবন মদ্যপান করার হার ৩.৯ শতাংশ থেকে ৬৯.৮ শতাংশ অবধি পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বছরে অন্তত একবার মদ্যপানের হারও ১০.৬ শতাংশ থেকে ৩২.৯ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ গড়ে ১৪ বছর ৪ মাস থেকে ১৮ বছর ৩ মাস বয়স থেকেই বর্তমান যুব প্রজন্ম মদ্যপান শুরু করে দিচ্ছে।
বিভিন্ন সমীক্ষা, সাক্ষাৎকার নিয়ে জানা গিয়েছে, একাধিক কারণে বর্তমানের যুবসমাজ মদ্যপান শুরু করছে। এরমধ্যে পিয়ার প্রেসার বা বন্ধুবান্ধবের চাপ, সামাজিক মেলামেশা, পরিবারের সমর্থন, সোশ্যাল মিডিয়া সহ একাধিক কারণে অনেকে মদ্যপান শুরু করেছিল। মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম উপায় মদ্যপান, এমনটাই ধারণা অনেকের। তাদের মতে, মদ্যপানের পর নিজেকে অনেক বেশি শান্ত, পরিণত অনুভূত হয়। আবেগে নিয়ন্ত্রণ থাকে।
উপরোক্ত কারণগুলির মধ্যে সামাজিক মেলামেশা, পরিবারের গেট-টুগেদার ও মানসিক শান্তির খোঁজই হল মদ্যপানের সবথেকে বড় কারণ।
বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বসলে, তাদের জোরাজুরিতেই অনেকে প্রথমবার মদ্যপান করেন। ‘পিয়ার প্রেসার’-কেই যুবসমাজ ‘নর্মাল’ বানিয়ে নিয়েছে। একবার খেলে কোনও ক্ষতি হবে না- এই কথা শুনতে শুনতেই বন্ধুদের মতো তারাও নিয়মিত মদ্যপান শুরু করে।
অফিসে সিনিয়রদের সঙ্গে বসে আলোচনা হোক বা অফিস পার্টি, সহকর্মী বা উর্ধ্বতন কর্তার সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্যও অনেকে মদ্যপান করেন। এছাড়া সপ্তাহ শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে অফিস পার্টি তো রয়েইছে।
অনেকে পরিবারের মেলামেশাতেও মদ্যপান শুরু করে। এক্ষেত্রে মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সমর্থন থাকে।
মদ্যপানে পরিবারের সমর্থনও একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবারাই অনেক সময় সন্তানদের হাতে এক পেগ তুলে দিচ্ছেন। পরিবারের সঙ্গে বসে মদ্যপান স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের মদ্যপানের বিষয়ে অভিভাবকরা জানলেও, তারা বাধা দেন না।
পছন্দের তারকারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মদের ব্রান্ডের প্রচার করছেন। ওই সমস্ত বিজ্ঞাপন দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে অনেকে মদ্যপান শুরু করছে। এছাড়া ইন্সটাগ্রামে মদের গ্লাস হাতে ‘অ্যাস্থেটিক স্টোরি’দেখেও অনেকে প্রভাবিত হচ্ছে। প্রচুর মানুষ তাতে লাইক, শেয়ার করায়, নিজেকেও সেই স্বীকৃতি এনে দিতে মদ্যপান করছে অনেকে।
মদ্যপানের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ফ্য়াক্টর হল নেশা। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একাংশের কথায়, মদ্যপানের পর তারা অনেক বেশি রিল্যাক্সড অনুভূতি পান। কঠিন সময়ে বা কোনও সমস্যায়, মানসিক চাপ, দুঃখ কমাতে মদ্যপান এবং এরপরের অনুভূতির জালে জড়িয়ে পড়ে মদ্যপানকে নিত্যদিনের রুটিন করে ফেলেন অনেকে।
গবেষক সোমদত্তা ঘোষ জানান, মদ্যপান বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণে শুধুমাত্র ক্যানসার হয়, তাই-ই নয়, একইসঙ্গে হৃদরোগ, রক্ত ও রক্তনালি মোটা হয়ে যাওয়া, ফুসফুসে সমস্যা, এমনকী মস্তিষ্কেও প্রভাব পড়ে। চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া ঘুমে সমস্যা, মানসিক উদ্বেগের মতো সমস্যাও দেখা যায়।
সামান্য পরিমাণ মদ্যপানে স্বাস্থ্যের কিছু উপকারিতা থাকলেও, নিয়মিত বা অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপানের কু-প্রভাব অনেক বেশি।