কলকাতা : আনিস মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের মন্তব্য ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আদালতে রাজ্যের এজি সৌম্যেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, খুন বা আত্মহত্যা নয়, পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে আনিসের। যেভাবে তল্লাশি চালানো হয়েছে তা ঠিক ছিল না বলেই জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যজুড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ বন্ধ রাখা উচিত বলে মনে করছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। এই নিয়ে আইনজীবী শামিম আহমেদ নিজের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, “আমি প্রথমেই বলব যাঁরা নির্দেশ দিচ্ছেন, সবার আগে তাঁদের ধরা উচিত। যাঁরা সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন, তাঁরা শুধুমাত্র নির্দেশ পালন করছেন। কিন্তু যাঁর নির্দেশে এটা হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য এর আগে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এভাবে নিয়োগ হওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। তারপর মঙ্গলবার রাজ্যে অ্যাডভোকেট জেনারেলের এ হেন মন্তব্য। সেই প্রসঙ্গে আইনজীবী ইমতিয়াজ আলি, “অ্যাডভোকেট জেনারেল যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি সঠিক। কিন্তু রাজ্য সরকার তো তা মানবে না। আজ বাধ্য হয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে এই কথা বলতে হল।”
এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন, “রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গোটা ঘটনা নিয়ে মানুষের সঙ্গে, সত্যের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন। তিনি যে কথাগুলি বলছেন, তার থেকে স্পষ্ট – একটি জিনিস লুকোনোর চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশির গাফিলতি যখন বলা হচ্ছে, তাহলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একজন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং একজন হোমগার্ডকে গ্রেফতার করা হল। ওসি ছুটিতে চলে গেল। এসপি তৃণমূল নেত্রীর কাছের লোক, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এইভাবে আনিস খানের মৃত্য়ু নিয়ে লুকোচুরি খেলছে।”
এই বিষয়ে সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ জানিয়েছেন, “আমরা চাই না কারও নিয়োগ বন্ধ হোক। এদের বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা এই ছেলেগুলির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু, তাঁদের যাঁরা সরকারের টাকায় তৃণমূলের ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে কাজ করানোর চেষ্টা করছে, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে। গত ১০-১১ বছর ধরে এদের মাইনে বাড়েনি, চাকরির স্থায়ীকরণ হয়নি। যে কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি থাকে। কিন্তু এদের নিয়োগের কী পদ্ধতি আছে?আমরা চাই এদের সঠিক পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হোক। আমরা কখনোই এদের চাকরি চলে যাওয়ার পক্ষে নই। এদের ট্রেনিং-ই বা কোথায়। সিভিক ভলান্টিয়াররা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে মোড়ে টাকা তুলছে, নাকি তাঁরা আনিস খানকে খুন করছে, নাকি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে, তা আমরা আজও বুঝতে পারছি না।”
সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম এবং বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তও অতীতে সরব হয়েছিলেন। নজরুল ইসলাম অতীতে বলেছিলেন, “এরা পুলিশের উপর শাসক দলের লোকেদের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করছে। থানার ওসি এবং অন্যান্য কর্তব্যরত অফিসারদের প্রভাবিত করছে।” স্বপন দাশগুপ্ত আবার তীব্র সমালোচনা করে বলেছিলেন, “সিভিক দিয়ে কিছুই হয় না। ট্রাফিকও হয়তো হয় না। তৃণমূলের ক্যাডাররাই হল সিভিক ভলান্টিয়ার।”