কলকাতা: হলদিয়ায় দলের শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকে গিয়ে বিচারপতিদের উদ্দেশে খোঁজা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের বিভিন্ন মামলায় বিচারপতিদের দেওয়া নির্দেশকে কটাক্ষ করেন অভিষেক। তার পরই কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “আমার বলতেও লজ্জা লাগে, বিচারব্যবস্থায় একজন, দু’জন এমন আছেন তল্পিবাহক হিসেবে যাঁরা যোগসাজশে কাজ করছেন। কিছু হলেই সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছেন। মার্ডার কেসে স্টে (স্থগিতাদেশ) দিয়ে দিচ্ছে। ভাবতে পারেন! আপনি অভিযুক্তকে নিরাপত্তা দিতে পারেন। কিন্তু মামলায় স্টে দিতে পারেন না।” অভিষেকের এই মন্তব্যের পরই শোরগোল পড়ে রাজনৈতিক মহলে। অভিষেকের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও অভিষেককে খোঁচা দিতে ছাড়েননি।
অভিষেকের এই মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অভিষেকের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে কটাক্ষের সুরে শুভেন্দু বলেন, “কে অভিষেক? কয়লা ভাইপো? ওর কোনও কথার উত্তর দেব না।” এরপরই শুভেন্দুর খোঁচা, “কার অ্যাকাউন্টে কয়লার টাকা ঢুকত? ওকে বাংলার বাংলার লোক কয়লা ভাইপো, গরুর ভাইপো বলে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “ওরা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবে। স্বার্থ বিঘ্নিত হলেই হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট কোনও কিছু মানবে না। উনি রাজনীতিতে নতুন এসেছে। তাই জানেনা আদালতের বিরুদ্ধে এ রকম কথা বলা যায় না।”
অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “রাজ্য সরকারের দু্র্নীতি একেবারে সামনে এসে পড়েছে। ওদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। তাই বিচারপতিরা সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলে ওদের গায়ে লাগছে।” এ নিয়ে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। সংবিধান অধিকার দিয়েছেন। তাই বলতে বাধা নেই।”
অভিষেকের মন্তব্যকে ভাল ভাবে নেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরঞ্জন চৌধুরীও। তিনি বলেছেন, “ক্ষমতায় থাকতে থাকতে একটা সময় আসে যখন মানুষের মধ্যে অহংকার, দাম্ভিকতার জন্ম নেয়। তখন তাঁরা মনে করে তাদের বিরোধিতা করার অর্থ অপরাধ করা। দেশের বিচারব্যবস্থা রয়েছে অপরাধকে মোকাবিলা করার জন্য। তাই যারা অপরাধী, তারা বিচারব্যবস্থাকেই অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে। কোন চ্যাংড়া ছেলে হঠাৎ করে অনেক কিছু পেয়ে গিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পারে, তার জন্য ভারতবর্ষের বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কখনও কমবে না।”