কলকাতা: বেঙ্গলুরুতে বিরোধীদের বৈঠক। বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী। বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। ক্ষোভ প্রকাশ করে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী, সুমন রায় চৌধুরী। টুইটে তাঁদের প্রশ্ন, “ভোটে ৮ কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু। তারপরেও কেন তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠক?” তাঁদের মতে, দলের নীচু তলার কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে এই বৈঠকে। হাইকম্যান্ডের কাছে তাঁদের আবেদন, “নিহত কর্মীদের পরিবারের কথা ভাবুন। তাঁদের আবেগের কথা ভাবুন।” রাহুল গান্ধীর কাছে আবেদন দুই নেতার।
বেঙ্গালুরুতে মঙ্গলবার মেগা বৈঠক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির। বৈঠকে রয়েছে ২৬ টি বিরোধী দল। সনিয়া, মমতা, কেজরিওয়াল, অখিলেশ, স্ট্যালিন, সীতারাম ইয়েচুরি-সহ প্রায় সব বিরোধী দলের সুপ্রিমোরাই হাজির রয়েছেন বৈঠকে।
দীর্ঘ দুবছর পর সাক্ষাৎ হল সনিয়া গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বেঙ্গালুরুর ওয়েস্ট এন্ড হোটেলে নৈশভোজের আগে একটি বৈঠকও হয়। সেখানে সোনিয়া গান্ধীর পাশেই বসতে দেখা যায় তৃণমূল সুপ্রিমোকে। দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ একান্তে কথাও হয়। দুজনের শারীরিক অবস্থা নিয়েও খোঁজ নেন দুজনে। লোকসভা ভোটের আগে মমতা-সোনিয়ার সমীকরণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
কিন্তু ঠিক এই বিষয়টিতেই আপত্তি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আগে একাধিকবার এই জোট ও তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিছুদিন আগে যে পাটনায় যে বৈঠক হয়েছে, তা নিয়েও একাধিকবার সরব হয়েছেন কৌস্তভ বাগচী ও সুমন রায়চৌধুরীরা। প্রদেশ নেতৃত্বের বক্তব্য, যেখানে একেবারে নীচুতলার কর্মীরা, যাঁরা মাঠে ময়দানে নেমে লড়াই করছেন, যাঁরা সংগঠনের একবারে প্রাথমিক ভিত, তাঁদের মনোবলে আঘাত লাগছে। বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়েছেন। কিন্তু সেই শাসক নেতৃত্বের সঙ্গেই তাঁদের শীর্ষ নেতৃত্ব নৈশভোজ সারছেন, এতে ভুল বার্তা পৌঁছাচ্ছে নীচু তলার কর্মীদের মনে।
নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যমে পঞ্চায়েত হিংসার ছবি দিয়ে ঠিক এই বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছেন। কংগ্রেস নেতা সুমন রায় চৌধুরী নিজের সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। ঠিক পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই একটি বিশেষ পোস্টের জন্য গ্রেফতার হয়েছিলেন কৌস্তভ। ছাড়া পাওয়ার পর মুন্ডন করে প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপসারণ করাবেন। এবারের নির্বাচনে একাধিক ক্ষেত্রে একা, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বামেদের সঙ্গে জোটে লড়েছে কংগ্রেস। কিন্তু ব্যাপক সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন তাঁরা। কেবল মুর্শিদাবাদেই ‘খুন’ হয়েছেন ৮ কংগ্রেস কর্মীর। আর যেখানে বাংলায় শাসকের বিরুদ্ধে তাঁরা লড়ছেন, সেখানে হাইকম্যান্ড কীভাবে তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে ডিনারে বসছেন!
সূত্রের খবর, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, গোটা বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখছে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, আদৌ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের ক্ষোভের বিষয়ে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল নয় হাইকম্যান্ড।
জোট বৈঠকে সিপিএম যোগেরও বিরোধিতা হচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে খোলা চিঠি দিয়েছেন এক বাম কর্মী। তিনি লিখেছেন, শাসকদলের সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই বহু বাম কর্মী রুখে দাঁড়িয়েছেন। তুমুল বিরোধিতা করে ১২ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি হয়েছে সিপিআইএমের। এতো কিছুর পরেও বিজেপি বিরোধী হিসাবে তৃণমূলকে মান্যতা দেওয়া অযৌক্তিক ও নীতিগতভাবে বিরাট ভুল। এমতাবস্থায় এই জোটে যাওয়া ঐতিহাসিক ভুল, সিপিএমকে ফের শূন্যের দিকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আর্জি জানিয়ে মহম্মদ সেলিমকে চিঠি দিয়েছেন বামকর্মী।