Pritikana Goswami: ৫০ টাকাও জোটেনি একসময়! সূচ-সুতোর জাদুতেই ‘পদ্মশ্রী’ পেলেন বাংলার প্রীতিকণা গোস্বামী
Pritikana Goswami: বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের আর পাঁচজন মেয়ের মতোই সাদামাটা জীবন। ম্যাট্রিক পাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই বাবার মৃত্যু স্তব্ধ করে দিয়েছিল প্রীতিকণা দেবীর পরিবারকে।
কলকাতা : বাংলার ঝুলিতে এবার এসেছে বেশ কয়েকটি পদ্ম পুরস্কার (Padma Award)। পদ্মশ্রী (Padma Shri) তালিকায় জলপাইগুড়ির ধনিরাম টোটোর পাশাপাশি রয়েছে এক স্বল্প পরিচিত নাম। ‘অপরিচিত’ বললেও হয়ত ভুল হবে না। প্রীতিকণা গোস্বামী (Pritikana Goswami)। যাঁর হাত ধরে পায়ের তলা মাটি শক্ত করছেন বাংলার বহু মহিলা, তাঁর নাম ক’জনই বা জানে! দশ হাতে, দশ অস্ত্র নয়, সূচ আর সুতোতেই তিনি ‘দশভূজা’। আর তাঁর নিজের লড়াই? সে গল্প অনুপ্রেরণা হয় দেবে অনেক মহিলাকেই।
লড়াই শুরু ১৯৭৩-এ। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের আর পাঁচজন মেয়ের মতোই সাদামাটা জীবন। ম্যাট্রিক পাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই বাবার মৃত্যু স্তব্ধ করে দিয়েছিল প্রীতিকণা দেবীর পরিবারকে। বিধবা মায়ের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করবেন কীভাবে?
মিরাকলটা ঘটল একদিন এক বন্ধুর বাড়িতে। বন্ধুর সেলাইয়ের কাজ মন দিয়ে দেখছিলেন তিনি। সেলাই করতে করতে শাড়িটা রেখে বেরিয়ে যান সেই বন্ধু। প্রীতিকণা কী মনে করে খানিকটা সেলাই করে দিয়েছিলেন। বন্ধু ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলে অস্বস্তিতে পড়ে যান তিনি। অস্বীকার করতে থাকেন। ওই বন্ধুই সেদিন চিনেছিলে প্রীতিকণাদেবীর হাতের যাদু।
কলকাতার এক দোকানের সন্ধান তাঁকে দেন তাঁর ওই বন্ধু। কাঁথা স্টিচের কাজের পোশান বিক্রি হয় সেখানে। রোজগারের জন্য সেখানে ছুটে যান প্রীতিকণা। কিন্তু বাধ সাধল সেই অভাব! শাড়ি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কাজ করার জন্য ৫০ টাকা জমা রাখতে হত তাঁকে। কিন্তু ৩০ টাকার বেশি দিতে পারেননি তিনি।
তাঁর আগ্রহ দেখে সেই দোকানের মালকিন বলেন, দোকানে বসেই কিছু একটা সেলাই করে দেখাতে। তাতেই অবাক করে দেন প্রীতিকণা দেবী। সেই শুরু। প্রতি পিস হিসেবে সেলাই করার কাজ চলে টানা ১৫ বছর। বিয়ে হয়, ঘরে আসে দুই সন্তান। পেট চলে প্রীতিকণার টাকাতেই।
মোড় ঘুরল ১৯৯০ সালে। ক্রাফট কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের তৎকালীন চেয়ারপার্সন প্রীতিকণাকে ওয়ার্কশপ খোলার পরামর্শ দেন। সেই শুরু! দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলারা কাঁথা স্টিচের কাজ শেখেন তাঁর কাছে। ২০০১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি।
মেয়ে মহুয়া লাহিড়ী এনআইএফটি থেকে পাশ করেছেন। কাঁথা কাজ না করলেও মায়ের হাতের কাজ আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে মহুয়ার হাত ধরেই। আর এবার সেই প্রীতিকণা গোস্বামী পেলেন ‘পদ্মশ্রী।’