কলকাতা : বছরভর অপেক্ষা পেরিয়ে আজ বাঙালির সেই বিশেষ দিন। আজ মায়ের বোধন। কেলেঙ্কারির কচকচানি ছেড়ে এখন মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড়, থিমের প্রতিযোগিতা, আলোর বাহুল্যেই মন দিয়েছে বাঙালি। আপামর বাঙালি যখন ষষ্ঠী, সপ্তমীর হিসেব কষছে, তখনও ওরা শুধুই গুনছে ৫৬৪, ৫৬৫….! আর কতদিন পর মিলবে হকের চাকরি? আর কতগুলো পুজো এভাবে কাটবে রাস্তায়? সন্তানকে ঠাকুর দেখানোর স্বাদ কবে পাবেন তাঁরা? উত্তর নেই। কিংবা থাকলেও ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই কোনওমতেই ধর্নামঞ্চ ছাড়ছেন না তাঁরা। গান্ধীমূর্তির পাদদেশের ছবিটা তাই বিগত সাড়ে পাঁচশ দিনের মতোই।
নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি রয়েছে শহরের রাজপথে। শুক্রবারই ৫৬৪ দিন পেরিয়েছে সেই আন্দোলন। ঠিক যেমন গত বছর পুজোতেও আন্দোলন করেছেন তাঁরা, একই ভাবে এবারও চলবে আন্দোলন। তাঁরা চান, সব লাউড স্পিকারের আওয়াজ পেরিয়ে যেন তাঁদের আর্তি পৌঁছে যায় প্রশাসনের কানে।
এক চাকরি প্রার্থী বলেন, আমাদের জীবনে পুজো আনন্দ বলে কিছু নেই। দুর্নীতি যে হয়েছে, তা প্রমাণিত। যোগ্যরা রাস্তায় বসে আছে। ধর্না মঞ্চে বসে থাকা এক মা বলেন, চার বছরের ছেলেটা, কিছুই বোঝে না। তাও জিজ্ঞেস করে, মা কবে চাকরি হবে? কী উত্তর দেব আমি? চোখে জল এসে যায় ওদের। তবু, গলার জোর কমে না। পঞ্চমী, ষষ্ঠীর সকালেও ধর্নামঞ্চে আওয়াজ ওঠে ‘নোটিস চাই, নোটিস চাই’।
শিক্ষামন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ পেলেই চাকরি দিতে প্রস্তুত সরকার। কিন্তু, কী করে বিশ্বাস করবেন? চাকরি প্রার্থীরা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও তো চাকরি দেবেন বলেছিলেন, কিন্তু কোথায় কী? আদালতই তাঁদের কাছে শেষ ভরসা। তাঁদের দাবি, মুখের কথায় বিশ্বাস করবেন না তাঁরা। বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে, সুপারিশ করতে হবে।
পুজোর সময় পুলিশ ব্যস্ত থাকে, এই কারণে একদল চাকরি প্রার্থীকে আন্দোলনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল না প্রশাসনের তরফে। তবে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশে অনুমতি পেয়েছেন তাঁরা। বিচারপতি উল্লেখ করেছেন, রাস্তায় বসে মানুষ চাকরি ভিক্ষা করবেন, আর পুলিশ ব্যস্ত থাকবে বলে আন্দোলন করা যাবে না, এটা হতে পারে না। তাই ষষ্ঠীর সকালেও একে একে ধর্মতলায় জড় হচ্ছেন চাকরি প্রার্থীরা।