কলকাতা : শিশুকন্যার শরীরে সূচ ফুটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পুরুলিয়ায় ওই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল শিশুর মা মঙ্গলা ও তাঁর প্রেমিক সনাতনের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনাতকে বিরলতম বলে উল্লেখ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে দুজনকেই ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল পুরুলিয়ার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। সেই মামলায় এবার কলকাতা হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডের সাজা রদ করল। পুরুলিয়া আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দে-র ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। রাজ্যের তরফে এই মামলায় সওয়াল করেন আইনজীবী সঞ্জয় বর্ধন। শুনানির পর মঙ্গলা ও তাঁর প্রেমিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, যদি ১০০ শতাংশ প্রমাণ থাকে অপরাধীর বিরুদ্ধে, সে ক্ষেত্রে ফাঁসির সাজা দেওয়া যেতে পারে, নাহলে নয়। সে কথা উল্লেখ করেই ফাঁসির সাজা রদ করা হয়েছে এ দিন। তবে ঘটনার নৃশংসতার কথা মাথায় রেখে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ৩০ বছর মায়ের প্রেমিক সনাতন সাজা কমানোর কোনও আর্জি জানাতে পারবে না।
পুরুলিয়ায় দেবেন মাহাত সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ওই শিশুকন্যা। তাকে পরীক্ষা করতে গিয়ে চমকে ওঠেন চিকিৎসকেরা। তার সারা শরীরে ছিল ক্ষত। এমনকী যৌনাঙ্গেও গভীর ক্ষত দেখতে পেয়েছিলেন তাঁরা। এরপর পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় হাসপাতালের তরফে। এরপর শিশুর এক্স রে করলে দেখা যায়, তার শরীরের ভিতর বড় আকারের সাতটি সূচ রয়েছে। এরপরই তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে মঙ্গলা তাঁর স্বামীকে ছেড়ে কন্যা সন্তানকে নিয়ে সনাতনের বাড়িতেই থাকতেন। সন্তানকে নাকি পছন্দও করতেন না তিনি। ওই শিশুকে যৌন খেলনা হিসেবে ব্যবহার করা হত বলেও জানতে পারে পুলিশ, আর ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা করতেন দুজনে। গ্রেফতার হওয়ার পর জেরায় এই সব কথা স্বীকার করেছিলেন সনাতন ও মঙ্গলা। পকসো আইনে ধর্ষণ, শিশুর ওপর শারীরিক অত্যাচার, খুনের চেষ্টার মতো অভিযোগ ওঠে শিশুর মা ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মঙ্গলা ও সনাতনের ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়।