কলকাতা: ফ্রুট জুস মামলায় এবার ‘ডাবর ইন্ডিয়া’-কে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলায় অভিযুক্ত ইউটিউবার ধ্রুব রাঠী বিতর্কিত সমস্ত ভিডিয়ো ইতিমধ্যে তাঁর চ্যানেল থেকে মুছে দিয়েছেন। তারপরও ধ্রুব রাঠীর চ্যানেলের সমস্ত ভিডিয়োর উপর স্থগিতাদেশ জারি রাখার আবেদন করায় ডাবর ইন্ডিয়া-কে ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি। পাশাপাশি ধ্রুব রাঠীকে এই বিষয়ে একটি এভিডেভিট করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ধ্রুব রাঠীর চ্যানেলের সমস্ত ভিডিয়োর উপর স্থগিতাদেশ জারি রাখার কোনও প্রয়োজন নেই বলেই মনে করে কলকাতা হাইকোর্ট। ডাবর ইন্ডিয়া-র তরফে এর পুনরায় স্থগিতাদেশ জারি রাখার আবেদন জানানো হলে বিচারপতি রবি কৃষাণ কাপুর কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। ডাবর ইন্ডিয়ার কৌঁসুলি দেবনাথ ঘোষকে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি বলেন, “আপনি আমাকে দিয়ে এরকম কিছু করানোর চেষ্টা করবেন না। পুনরায় মহাভারত শুরু করবেন না। আগে তাঁকে (ধ্রুব রাঠী) হলফনামা দিতে দিন।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ধ্রুব রাঠীর বিরুদ্ধে ওঠা ফ্রুট জুস মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে শুনানিতে তাঁর আইনজীবী নকুল গান্ধী দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিচারপতিকে বলেন, “আমার মক্কেল রিয়েল ফ্রুট জুস নিয়ে তৈরি তাঁর ভিডিয়োগুলি প্রাইভেট করে দিয়েছেন। যদিও কোনও ব্যবহারকারী সেই ভিডিয়োর ইউআরএল ডাউনলোড করে আপলোড করেন, তাহলে তার নোটিফিকেশন ধ্রুব রাঠীর চ্যানেলে আসে এবং তিনি সরাসরি সেটি মুছে দিতে পারেন। কিন্তু, কেউ যদি প্রকৃত ভিডিয়োটি নিয়ে অন্যভাবে আপলোড করেন, তার নোটিফিকেশন ধ্রুব রাঠী পাবেন না।” তবে আদালতের নির্দেশ মেনে তাঁরা তাঁদের চ্যানেলের সমস্ত ভিডিয়ো মুছে দিয়েছেন। ফলে অন্য কেউ সেটি আপলোড করলে তাঁদের কার্যত কিছু করার নেই বলে জানান।
ধ্রুব রাঠীর আইনজীবীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে ডাবর ইন্ডিয়ার তরফে আইনজীবী দেবনাথ ঘোষ জানান, ভিডিয়োগুলি ধ্রুব রাঠীর তৈরি। তাই ওই ভিডিয়োগুলির উপর স্থগিতাদেশ জারি রাখার আবেদন জানান তিনি। ডাবর ইন্ডিয়ার কৌঁসুলির এই আবেদনেই ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি। তিনি জানান, যদি ধ্রুব রাঠী কোনও ভিডিয়ো আপলোড করেন তাঁর বিরুদ্ধে নির্দেশ জারি করা যেতে পারে। কিন্তু, একটি বহুজাতিক কোম্পানিকে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলা করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে না। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি ঘোষ ডাবর ইন্ডিয়া-র আইনজীবীকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করেন। অন্যদিকে, ধ্রুব রাঠীকে হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছেন এবং এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৮ মে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি তাজা ফলের রসের সঙ্গে প্যাকেটজাত জুসের তুলনা করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিয়ো প্রকাশ করেন ধ্রুব রাঠী। তিনি দেখান কীভাবে এটি স্বাস্থ্য এবং চুলের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষত শিশুদের কীভাবে প্রভাবিত করে তা দেখান তিনি। আর সেটা করতে গিয়ে রিয়েলের বিজ্ঞাপনের ভিডিয়ো ব্যবহার করেছিলেন। কেন সেই ব্র্যান্ডকে ভিডিয়োতে দেখানো হল, তা নিয়েই মামলা গড়িয়েছে আদালতে। এরপর গত ২৪ মার্চ আদালত ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব থেকে ওই সমস্ত ভিডিয়ো ব্লক করার নির্দেশ দেয়।