কলকাতা: তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যা নিয়ে সরব আইনজীবী মহলের একাংশ। তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত চাইলে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে শাস্তি দিতে পারে বলেও জানান অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত।
এ দিন, টিভি৯ বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, “আদালত সম্পর্কে কোনও ব্যক্তি এই বক্তব্য রাখেন তাহলে সমালোচনা হতেই পারে আদালতের। তবে কোর্ট যদি মনে করে ওই বক্তব্য থেকে এমন কোনও কথা উঠে আসছে যা ‘ইন্টারফেয়ারেন্স উইথ দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস’ অথবা কোনও ‘স্কারিলার্ক রিমার্ক’ তাহলে এটা ‘ক্রিমিনাল কন্টটেম্পট অব কোর্ট’ হবে কি না সেই বিষয়ে দেখা হয়।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এক্ষেত্রে আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করতে পারে বা কেউ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর অপরাধ প্রমাণিত হতে আদালত শাস্তি, জরিমানা করতে পারে।
শুক্রবার এনআরএসএ- ভর্তি বেশ কয়েকজন আহত তৃণমূল কর্মীদের দেখতে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । সেখান থেকে বিচারব্যবস্থার একাংশের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। কটাক্ষ করতে গিয়ে বলেন, “আমি যাদের কথা বলছি তাঁদের সবাইকে হাইকোর্ট প্রোটেকশন দিয়ে রেখে দিয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের কথায়, “গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে বিচারব্যবস্থা। চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই দুটো স্তম্ভ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজেপি।” এরপরই বিতর্কিত মন্তব্য করে অভিষেক বলেন, “হাইকোর্টের একাংশ এই সমাজবিরোধীদের যেভাবে মদত দিচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক।” একইসঙ্গে বিচারপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি যদি প্রোটেকশন চাইতে যাই, আমায় দেবেন?”
অভিষেকের এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি জানান, মুর্খের প্রলাপ। প্রশাসনকে আদালত তার কাজে বাধা দেয়নি। আইনসঙ্গত অবস্থায় কাজ করতে না পারলে আদালত বাধা দেয়। এরপর নাম না করে অভিষেককে বিঁধে বলেন, “যিনি এই কথা বলেছেন তিনি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি সুপ্রমিকোর্টে বারবার গিয়েছেন রক্ষাকবচের জন্য। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তারপর রক্ষাকবচ পাননি। আর রক্ষাকবচ পাননি বলেই নিজের ব্যথা প্রকাশ করলেন।”
এর আগেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ধরনের বক্তব্য রাখা হয়েছে। আইনজীবী মহলের একাংশ সরবও হয়েছেন। ফলে এইবারও হতেই পারে আইনজীবীদের একাংশ অভিষেকের বক্তব্য নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। এর আগেও এই বিষয়ে যখন আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল তখন বিচারপতিরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে সংবিধানে রাজনীতি এবং বিচারব্যবস্থা দুটি পৃথক অংশ।সেক্ষেত্রে তারা যাতে একে অপরকে দোষারোপ না করে সেই বিষয়টি যেন উভয় পক্ষই মাথায় রাখে।