RG Kar-এ রহস্যমৃত্যুর লম্বা ইতিহাস: মাদক, পর্ন চক্র, সেক্স ব়্যাকেটের গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ!

Aug 22, 2024 | 4:56 PM

RG Kar mystery deaths: আরজি কর মেডিকেল কলেজে তিলোত্তমা কাণ্ডর মতো রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম ঘটল না। বস্তুত এই মেডিক্যাল কলেজে বারংবারই এই ধরনের ঘটনা রয়েছে। কখনও ছাত্র, কখনও অধ্যাপক, কখনও হউস স্টাফদের মৃত্যু হয়েছে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে। কখনও হাসপাতালে পর্নোগ্রাফি চক্র চলার অভিযোগ উঠেছে। কখনও উঠেছে মাদক চক্র, কখনও পতিতাবৃত্তি চলার মতো গুরুতর অভিযোগও।

RG Kar-এ রহস্যমৃত্যুর লম্বা ইতিহাস: মাদক, পর্ন চক্র, সেক্স ব়্যাকেটের গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ!
প্রতীকী ছবি
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

কলকাতা: ৩১ বছর বয়সী স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী মহিলা ডাক্তারের ধর্ষণ এবং হত্যা অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার ন্যায়বিচার চেয়ে সরব হয়েছেন গোটা দেশের চিকিৎসক মহল, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সাধারণ মানুষ। তবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে কিছু রহস্যেরও। সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে এই ঘটনার সম্ভাব্য আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, মৃতার পরিবারবর্গ-সহ বহু মানুষেরই ধারণা, এর পিছনে অন্য কোনও কাহিনি রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে, আরজি কর মেডিকেল কলেজে এই ধরনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম ঘটল না। বস্তুত এই মেডিক্যাল কলেজে বারংবারই এই ধরনের ঘটনা রয়েছে। কখনও ছাত্র, কখনও অধ্যাপক, কখনও হাউস স্টাফদের মৃত্যু হয়েছে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে। কখনও হাসপাতালে পর্নোগ্রাফি চক্র চলার অভিযোগ উঠেছে। কখনও উঠেছে মাদক চক্র, কখনও পতিতাবৃত্তি চলার মতো গুরুতর অভিযোগও। তিলোত্তমার ঘটনায় সেই সব কালো ঘটনাো ফের ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছে সামনে –

২০০১, সৌমিত্র বিশ্বাস

২০০১ সালের ২৫ অগস্ট, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল সৌমিত্র বিশ্বাস নামে এক চতুর্থ বর্ষের ছাত্রর। অনেকটা তিলোত্তমার ঘটনার মতোই কর্তৃপক্ষ দ্রুত বলে দিয়েছিল এটা আত্মহত্যা। কিন্তু নিহতের পরিবার এবং নিহত শিক্ষার্থীর অনেক সহপাঠী সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সৌমিত্রর মা এবং তাঁর কয়েকজন সহপাঠী অভিযোগ করেছিলেন, কলেজ হোস্টেলের মধ্যে এক পর্নোগ্রাফি চক্র চলত। হোস্টেলের ঘরে অশ্লীল ছবির শ্যুট করা হত। সেই সঙ্গে চলত সেক্স ব়্যাকেট। এমনকি মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মতো জঘন্য বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িত। বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী দাবি করেছিলেন, সৌমিত্র এই অন্ধকার কাজকর্ম ফাঁস করে দিতে চেয়েছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। অরোমিতা দাস এবং অমিত বালা নামে সৌমিত্রর দুই সহপাঠীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে, মামলাটি অমীমাংসিতই থেকে গিয়েছিল। সৌমিত্রর মৃত্যু এখনও রহস্যে ঘেরা।

২০০৩, অরিজিৎ দত্ত

২০০৩-এর ৫ ফেব্রুয়ারি ‘আত্মঘাতী’ হয়েছিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক হাউসস্টাফ অরিজিৎ দত্ত। পুলিশ জানিয়েছিল, প্রথমে অরিজিৎ তাঁর হাতে অ্যানাস্থেশিয়ার ইনজেকশন দিয়েছিলেন। তাতে তাঁর হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল। তারপর তাঁর হাতের শিরা একটি ব্লেড দিয়ে চিড়ে দিয়েছিলেন। এরপর, একটি সার্জিক্যাল কাচি দিয়ে হাতের শিরাগুলি কেটেছিলেন। সবশেষে মেইন হোস্টেলের ছাদ থেকে নীচে ঝাঁপ মেরেছিলেন। নীচে পড়ে থাকার সময়ও তাঁর হাতে সার্জিক্যাল কাচিটি ছিল। সেটা ছিল সরস্বতী পুজোর ঠিক আগের দিন। বীরভূমের শিউড়ির ২৪ বছরের এই যুবকটির মৃত্যু ঘিরেও দানা বেঁধেছিল রহস্য। কারণ, পুলিশ কোনও সুইসাইড নোট বা কেন অরিজিৎ সুইসাইড করলেন, তার কোনও কারণ খুঁজে পায়নি। কম কথা বলতেন অরিজিৎ। পুলিশ শেষ পর্যন্ত বলেছিল, এর পিছনে ব্যর্থ প্রেমের কোনও ঘটনা থাকতে পারে। তবে নিশ্চিতভাবে তারা কিছু বলতে পারেনি। কয়েকদিন পর এই ঘটনাও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল।

২০০৩, প্রবীণ গুপ্তা

অরিজিতের মাত্র কয়েকদিন পরই, ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র, প্রবীণ গুপ্তা। মানিকতলার লালমোহন হোস্টেলে থাকতেন হরিয়ানার বাসিন্দা প্রবীণ। গভীর রাতে তিনি তাঁর দুই হাতের হাতের কব্জির শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, এক বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে নাকি তিনি একটি সুইসাইড নোট লিখেছিলেন। প্রেমে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে অবসাদ গ্রাস করেছিল। আর তাই নাকি তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। তবে, তাঁর সহপাঠী এবং রুম-মেটরা জানিয়েছিলেন, প্রবীণ গুপ্তা মোটেই বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন না। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন, তা তাঁরা ভাবতেই পারেন না। প্রবীণ গুপ্তার বাবা জানিয়েছিলেন, কিছু একটা বিষয় নিয়ে তাঁর ছেলে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কী নিয়ে প্রবীণের উদ্বেগ ছিল, তা অবশ্য তিনি কোনোদিনই প্রকাশ্যে আনেননি। ঘটনাও মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছিল।

২০১৬, ডা. গৌতম পাল

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ছিলেন ডা. গৌতম পাল। ২০১৬-র ২৪ অক্টোবর, তাঁর দক্ষিণ দমদমের ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৫২ বছর বয়সী এই ডাক্তারের পচা গলা দেহ। দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে, প্রথম তলার একটি ঘরের বিছানায় তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছিল পুলিশ। কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। যে বিছানায় লাশ মিলেছিল, সেটিও ছিল নিখুঁত অবস্থায়। পুলিশ অনুমান করেছিল, আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে, মৃত্যুর কারণ নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেনি। দরজাটি ভিতর থেকে আটকানো থাকায়, বাইরের কারও জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিল পুলিশ। তাঁকে কেউ বিষ খাইয়েছিল কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে গৌতম পালের পেটের বিষয়বস্তু সংরক্ষণও করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা তাঁর ঘরের মেঝেতে রক্তের দাগ এবং তাঁর মুখে কিছু আঘাতের চিহ্নও পেয়েছিলেন।

২০২০, পৌলমী সাহা

সেই সময় কোভিড-১৯ মহামারি চলছিল। মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল দ্বিতীয় বর্ষের স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী মহিলা চিকিৎসক পৌলমী সাহার। পুলিশ জানিয়েছিল, আরজি কর হাসপাতালের ষষ্ঠ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন পৌলমী। বন্ধু এবং সহকর্মীরা বলেছিলেন, সম্ভবত বিষণ্নতা গ্রাস করেছিল তাঁকে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কোভিড-১৯ ক্লিনিকে কাজ করছিলেন। ১ মে, শিফট শুরুর ঠিক আগে, সকাল ১১টায় তিনি ষষ্ঠ তলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন বলে, জানিয়েছিল পুলিশ। যদিও এই ক্ষেত্রেও কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। পৌলামির মৃত্যুকে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল অনেকগুলি প্রশ্ন। যেগুলির আজ অবধি কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কিছু বের করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।

২০২৩, শুভ্রজ্যোতি দাস

২০২৩-এ ড্রাগ ওভারডোজের জেরে মৃত্যু হয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন শুভ্রজ্যোতি দাসের। আরজি কর থেকেই এমবিবিএস করার পর, ওখান থেকেই ইন্টার্নশিপ করছিলেন তিনি। কাকার সঙ্গে নিমতায় থাকতেন তিনি। নিমতার বাড়ি থেকেই তাঁকে সংজ্ঞাহীনভাবে পেয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। তাঁকে দ্রুত আরজি কর কলেজে এনে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে, তাঁকে রক্ষা করা যায়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অ্যান্টিডিপ্রেসনড (অবসাদ কাটানোর ওষুধ) ওভারডোজে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু, তিনি নিজেই কি অতগুলি অ্যান্টিডিপ্রেসনড খেয়েছিলেন? নাকি কেউ তাঁকে খাইয়ে দিয়েছিল? পুলিশ তা বের করতে পারেনি। এই ক্ষেত্রেও কোনও সুইসাইড নোট পায়নি পুলিশ, যে সে আত্মঘাতী হয়েছে বলা যায়। শুভ্রজ্যোতির মৃত্যুরহস্য, রহস্যই থেকে গিয়েছে।

তিলোত্তমার মর্মান্তিক ঘটনা আরজি কর মেডিকেল কলেজের অতীতের এই একের পর অমীমাংসিত রহস্যমৃত্যুর ঘটনাগুলিকে ফের সামনে এনে দিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার অভিযোগ আরজি করে দীর্ঘদিনের। তিলোত্তমার ঘটনাতেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ থেকে তদন্তকারীরা। এখন, তদন্তের ভার সিবিআই-এর হাতে। অনেকেই আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে। তবে, এই অন্ধকারময় অতীত প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, আরজি করে কী বহুদিন ধরেই অন্য কোনও অপরাধ চক্র চলে? সৌমিত্র বিশ্বাসের ক্ষেত্রে যে পর্ন চক্র ও সেক্স ব়্যাকেটের অভিযোগ উঠেছিল, তা কি আজও সক্রিয়? এর সঙ্গে তিলোত্তমা কাণ্ডের কোনও যোগ নেই তো?

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)

Next Article