Saddam: রাইস পুলার-অস্ত্র-সোনা-অ্যান্টিক পাচার! ‘সুড়ঙ্গম্যান’ সাদ্দামের উত্থান কোন পথে?

সিজার মণ্ডল | Edited By: জয়দীপ দাস

Jul 16, 2024 | 8:52 PM

Saddam: ক্যামেরার বাইরে অনেক অন্য গ্রামের বাসিন্দাই বলছেন, সাদ্দামদের গ্রামে বাইরের লোকেদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। পুলিশের ধারণা আসলে দালালরাই আসত এই গ্রামে। সাদ্দামের বাড়ি দেখলেই স্পষ্ট, এই এলাকার অন্য বাড়ির থেকে তা অনেকটাই আলাদা। বৈভবের ছাপ স্পষ্ট গোটা বাড়িতে। অথচ খাতায়-কলমে সাদ্দাম সামান্য চাষি।

Saddam: রাইস পুলার-অস্ত্র-সোনা-অ্যান্টিক পাচার! ‘সুড়ঙ্গম্যান’ সাদ্দামের উত্থান কোন পথে?
কী বলছে গ্রামের লোকজন?
Image Credit source: TV-9 Bangla

Follow Us

কলকাতা: গুরুতর সব অপরাধে সাদ্দামই সর্দার? সাদ্দামের হাতে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক? বাড়ির নিচে সুড়ঙ্গের খোঁজ মেলার পর চিন্তার ভাঁজ নবান্নের কপালে। ডিজির বার্তার পরেই কুলতলি চষে ফেলছে পুলিশ। সাদ্দামের খোঁজে চলছে অভিযান। কিন্তু এই সাদ্দামের উত্থান কীভাবে? তথ্য বলছে, রাইস পুলার (এক ধরনের ধাতব বস্তু যার অলৌক ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানে কোনও অস্তিত্ব নেই) নিয়ে মানুষ যখন সচেতন হয়েছে তখন শুরু হয়েছে নকল অ্যান্টিকের ব্যবসা। এই এলাকায় পুলিশ বিভিন্ন সময় সত্যিকারের কিছু অ্যান্টিক মূর্তি উদ্ধার করেছে। তার মধ্যে কোনওটা ৫০০ বা কোনওটা ৮০০ বছরের পুরনো অষ্টধাতুর মূর্তি বা কষ্টিপাথরের মূর্তি। এগুলি অনেক সময়েই বাংলাদেশ থেকে নদীর চোরাপথে এদেশে আসে বলে জানা যায়। সেগুলিকে সামনে রেখেই এই নকল অ্যান্টিক বা নকল অ্যান্টিক গয়নার টোপ দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে একইভাবে প্রতারণা করা হয়। সাদ্দামকে যে মামলায় খোঁজা হচ্ছে সেটাও মূলত নকল অ্যান্টিকের।

সোনার তৈরি প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তি দেওয়ার টোপ দিয়ে নদিয়ার এক বাসিন্দার কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে একটা গ্যাং। অভিযোগ পেতে সেই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে সাদ্দাম এবং তাঁর ভাইয়ের নাম উঠে আসে। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও নানা প্রকার অভিযোগ। এরা প্রতারণার ব্যবসা যেমন করে, পাশাপাশি অনেকেই এদের মধ্যে ডাকাতি খুনের অভিযোগেও বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছে। সূত্রের খবর, জাল নোটের ব্যবসার সঙ্গেও রয়েছে যোগ।

এই চক্রগুলি মূলত অপারেট হয় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। সাদ্দাম এবং তাঁর ভাইয়ের বাড়ি যে গ্রামে সেই গ্রামটাও অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকায়। খালের পাশ দিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে পাঁচ কিলোমিটার গেলে শেষ গ্রামটিই সাদ্দামের গ্রাম। খালে ঘেরা গোটা গ্রাম। অর্থাৎ জলপথে ঘেরা থাকায় এই প্রত্যন্ত এলাকা পুলিশ ঢোকার অনেক আগেই অপরাধীদের কাছে খবর চলে যায়। এই প্রকারের এমন অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানে মুড়ি-মুড়কির মত অস্ত্র রয়েছে বলেও শোনা যায়। 

এও শোনা যায় গ্রামে একা সাদ্দাম যে এই জাতীয় চক্রের সঙ্গে যুক্ত তা নয়, গ্রামে অনেকেই ওই প্যারালাল বা সমান্তরাল কালো বাজারের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। ফলে বাইরে থেকে এসে এদের ধরপাকড় করতে গেলে পুলিশকে ব্যাপক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়।  এলাকায় যেহেতু কুখ্যাত সব দুষ্কৃতীদের যোগাযোগ রয়েছে তার ফলে আশেপাশের গ্রামের মানুষও মুখ খুলতে সাহস পায় না।

খাতায়-কলমে সাদ্দাম সামান্য চাষি

ক্যামেরার বাইরে অনেক অন্য গ্রামের বাসিন্দাই বলছেন, সাদ্দামদের গ্রামে বাইরের লোকেদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। পুলিশের ধারণা আসলে দালালরাই আসত এই গ্রামে। সাদ্দামের বাড়ি দেখলেই স্পষ্ট, এই এলাকার অন্য বাড়ির থেকে তা অনেকটাই আলাদা। বৈভবের ছাপ স্পষ্ট গোটা বাড়িতে। অথচ খাতায়-কলমে সাদ্দাম সামান্য চাষি। 

এই ধরনের সিন্ডিকেট বা চক্র একটা নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অর্থাৎ একজন নেতার আন্ডারে যে সবাই এইভাবে চলে তা নয়। তথ্য বলছে, এই ধরনের সিন্ডিকেট মোটামুটি চলে চাহিদা যোগান তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। গোচরণ, দক্ষিণ বারাসাত, জয়নগরে যেমন এক ধরনের এজেন্ট রয়েছে, পাশাপাশি কলকাতা শহরে এমনকি ভিন রাজ্যে মুম্বই, দিল্লি, পুণের মতো বড় বড় শহরেও এজেন্টরা রয়েছে। 

তারা যখন এই ধরনের ক্রেতার হদিস পায় যারা এই ধরনের অ্যান্টিক কিনতে চাইছে তখনই তারা তাদের নিচের তলার এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এইভাবে ধাপে ধাপে সাদ্দামদের লেভেল পর্যন্ত পৌঁছায়।

গ্রামগুলি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়াতে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশি নজরদারি কম থাকে। এর আগে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে এই সমস্ত এলাকায় বাংলাদেশি জলদস্যু থেকে শুরু করে চোরা শিকারিরাও ঘাঁটি কেরে রয়েছে। এর থেকে স্পষ্ট সীমান্তে পারেও রয়েছে যোগাযোগ। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এই ধরনের অপরাধীদের ওপর নজর রাখার জন্য অনেকটাই দায়িত্ব বর্তায় ভিলেজ পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ারদের ওপর। কিন্তু, সিভিক ভলান্টিয়াররা বহু ক্ষেত্রেই এই ধরনের এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অনেকেই ভয়ে মুখ খোলেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা লাভবান হন বলেও অভিযোগ ওঠে। ফলস্বরূপ, নজরদারির অভাব থেকেই যায় বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।

Next Article