কলকাতা: সুন্দরবনে মিলেছে সাদ্দামের রহস্যময় সুড়ঙ্গের খোঁজ। রাইস পুলার-অস্ত্র-সোনা-অ্যান্টিকের কারবার! সুড়ঙ্গ পথেই চলত কারবার? উত্তরের খোঁজে এলাকা চষে বেড়াচ্ছে পুলিশ। কিন্তু, যাঁর খোঁজে এত তল্লাশি সেই সাদ্দামের উত্থান কীভাবে? উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। সূত্রের খবর, দীর্ঘ ২০ থেকে ২২ বছর ধরে মূলত কুলতলি, পাথরপ্রতিমা, দক্ষিণ বারাসাত এলাকায় স্থানীয় দুষ্কৃতীরা মিলে একটা বড়সড় প্রতারণার চক্র তৈরি করে। ২০-২২ বছর আগে যেমন খুব জনপ্রিয় ছিল রাইস পুলিং স্ক্যাম। কথিত আছে, ব্রিটিশ আমলে সরকারি জমি জরিপের জন্য এক ধরণের তামার দণ্ড ব্যবহার করা হতো। সেই তামার পাতগুলি মাটিতে পোঁতা থাকতো জমি জরিপের নিশানা হিসেবে। সেই পাত গুলি ১০০ থেকে ১৫০ বছরে বজ্রপাতের ফলে নাকি ধাতব পরিবর্তন হয়ে ইরিডিয়ামে পরিণত হয়। সেই পাতগুলির নাকি বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা আছে। পোড়া বাজারে এই তামা থেকেই ইরিডিয়ামে পরিবর্তিত ধাতুর একটা বিশেষ মূল্য আছে। অনেকেই মনে করেন, এই ধাতু দিয়ে তৈরি কয়েন বা যে কোনও বাসনপত্রের নাকি অলৌকিক ক্ষমতা তৈরি হয়। এই ধাতু আসল না নকল সেটা বোঝা যায় ওই ধাতুর পাশে চাল রাখলে। শোনা যায়, লোহা যেমন চুম্বককে আকর্ষণ করে বা চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে ঠিক সেরকম এই ধাতু নাকি চালকে আকর্ষণ করে। সেখান থেকে এই ধাতুর নাম রাইস পুলার। সূত্রের খবর, রাইস পুলার নিয়ে দীর্ঘ ব্যবসার ইতিহাস রয়েছে সাদ্দামের।
যদিও বিজ্ঞানে এই জাতীয় ধাতুর কোনও বাস্তবতা মেলেনি। কিন্তু, চোরা মার্কেটে এই কথিত গল্পের আধারে চলে আসা ধাতুর ব্যাপক মূল্য। ১ ফুট লম্বা, ২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের এরকম ধাতুর দাম প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি। এই ধরনের ধাতু বা এই ধাতুর তৈরি কয়েন বিক্রির লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন সময় গোচরণ, দক্ষিণ বারাসাত এবং কুলতলি এলাকায় বিভিন্ন ক্রেতাকে নিয়ে আসা হয়েছে এর আগে। অভিযোগ এমনটাই। সিআইডি এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ অন্তত কুড়িখানা ঘটনার তদন্ত করেছে বলে জানা যাচ্ছে। যেখানে এই রাইস পুলারের নামে বা রাইস পুলার কম দামে বিক্রি করার টোপ দিয়ে এ রাজ্যের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভিন রাজ্যের এমনকী মুম্বই এবং পুণের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা চলেছে।
বহু ক্ষেত্রেই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন এই সমস্ত ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রেই এই ব্যবসায়ীরা পুলিশ অভিযোগ জানাতেন না কারণ এই কেনাকাটা আইনত নিষিদ্ধ। তারপরেও যারা অভিযোগ জানাতেন তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এই চক্রের একাধিক সদস্যকে এই গোচরণ, কুলতলি, জীবন মণ্ডলের হাট, প্রিয়র মোড় এই সমস্ত এলাকার গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তারপরে এরা জামিন পেয়ে গিয়েছে। সক্রিয় থেকেছে চক্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে প্রতারণার স্টাইল। রাইস পুলার নিয়ে মানুষ যখন সচেতন হয়েছে তখন থেকেই আবার শুরু হয়ে যায় নকল অ্যান্টিকের ব্যবসা। আরও ফুলেফেঁপে ওঠে সাদ্দামেরা।