কলকাতা: আমরা মানুষ, তোমরাও মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়। করুণাময়ীতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন স্পষ্ট করল সেই তফাতটাই। শিল্পী সাহিত্যিক থেকে কবি নাট্যকার, বিদ্বজ্জনদের মধ্যেও যে মতের তফাত রয়েছে, মানসিকতা, অবস্থানের তফাত রয়েছে, সেটা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল করুণাময়ীর কুরুক্ষেত্র। নাগাড়ে সরব একদল। আজ ফের পথে নামছেন বাম ঘেঁষা বিশিষ্টরা, যদিও আরেকদল যাঁরা সরকারপন্থী, তাঁরা এখনও চুপ।
ওঁরা পড়েছিলেন পথেই। মাথায় ছিল না ছাদ, ছিল না কোনও আভরণ। হকের চাকরি লড়ে নেওয়ার চেয়েও চোখে ছিল এক রাশ স্বপ্ন। পুলিশের হিসাব নিকেশ ছিল মাত্র ১৬ মিনিটের। মধ্যরাতের নিখুঁত অপারেশনের কাজ হাসিল। ২০১৪ সালের টেন অনশন থেকে ২০১৭ সালের চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না, শুক্রবার সবই তছনছ, ক্লিন হয়ে গেল করুণাময়ী।
তবে এই ঘটনায় মাথা হেট হয়েছে বাংলার, বলছেন বিদ্বজনেদেরই একাংশ, বিরোধীরা। শান্তিপূর্ণ এই অবস্থানে কেন পুলিশি অভিযান? ঘটনার নিন্দায় ফের পথে নেমেছে নাগরিক সমাজ। ১অগস্ট নিয়োগ কেলেঙ্কারি মিছিলের পর শনিবার বিকালে ভিক্টোরিয়া হাউজ় চত্বরে আবার মিছিল হবে বিশিষ্টদের। নাগরিক মিছিলের মূল এজেন্ডা ছিল করুণাময়ী কাণ্ডে ধিক্কার। পরে সংযোজন হয়েছে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই-এর আন্দোলনে পুলিশি বাধার ইস্যুও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই পোস্টে পোস্টে ছয়লাপ প্রচার, পাশাপাশি মিছিলকে সফল করার ডাক দিয়েছে বাম নেতৃত্ব। তবে নাগরিক মিছিলে সামনের সারিতে না থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামেদের তরফে। পরিবর্তে মিছিলের পুরোভাগে থাকতে চান, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, বাদশা মৈত্র, চন্দন সেন, অনীক দত্ত, দেবদূত ঘোষ, বিমল চক্রবর্তী,সীমা মুখোপাধ্যায়দের মতো পরিচিত মুখ। তবে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা লড়ার সুবাদে থাকতে পারেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, ফিরদৌস শামিম সহ বিভিন্ন বামপন্থী আইনজীবীও। শিক্ষাজগত থেকে থাকবেন পবিত্র সরকার, শুভঙ্কর চক্রবর্তীরাও।
শিক্ষাবীদ পবিত্র সরকার বলেন, “এই ভাবে সভ্য দেশে আন্দোলনকারীদের পুলিশ দিয়ে তুলে দেওয়ার ঘটনা কুৎসিত।” নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন বলেন, “একটা চূড়ান্ত বর্বরতা চলছে, ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিকতার প্রতি সম্মান কতটুকু থাকতে পারবে এরপর, সেটাই প্রশ্ন।”
শাসকপন্থী বিদ্বজ্জনেদের অনেকেই চুপ। শুক্রবার মুখ খুলেছেন অপর্ণা সেন। তিনি লিখেছেন, “অনশনকারীদের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে তৃণমূল সরকার! অহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করা হল কেন? সরকারের অনৈতিক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করছি!”