কলকাতা: প্রথিতযশা আইনজীবী সমরাদিত্য পালের (Samaraditya Pal) জীবনাবসান। বৃহস্পতিবার ভোরে নিউ আলিপুরের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী রুমা পাল সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। দীর্ঘদিন ধরেই বয়সজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বিশিষ্ট আইনজীবীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে সকালেই পৌঁছে যান হাইকোর্টের বহু আইনজীবী। একাধিক বিচারপতিরাও এদিন গিয়েছেন সমরাদিত্য পালকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। আইনজীবী মহলে শোনা যায়, সংবিধান বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন সমরাদিত্য পাল। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এদিন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘সমরাদিত্য পাল ছিলেন আইনের জাহাজ’।
কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন তিনি। একসময় পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় মীরা পাণ্ডের হয়ে সওয়াল করেছিলেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টে সেই মামলা হেরে যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মীরা পাণ্ডে। সেই সময়ও পাশে ছিলেন সমরাদিত্য পাল। সিঙ্গুর মামলায় টাটার পক্ষে লড়েছিলেন তিনি। বিধানগর উপ নির্বাচনেও লড়েন সমরাদিত্য পাল।
আইনজীবীরা কেউ কেউ বলছেন, সারা দেশে এমন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আর দ্বিতীয় নেই। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো আইনজীবীরাও মাঝে মধ্যেই তাঁর কাছে আইন সংক্রান্ত পরামর্শ নিতেন বলে জানা যায়। এদিন বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, মূলত বাম মনষ্কই ছিলেন সমরাদিত্য পাল। খুব উপকারী মানুষও ছিলেন তিনি। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, তিনি যখন রাজ্যসভায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তখন নির্বাচনের খরচের কথা ভেবে তাঁকে ১ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন সমরাদিত্য বাবু।
তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বইও রয়েছে। সংবিধানের ওপর সিরিজ লিখেছিলেন তিনি। আদালত অবমাননা নিয়েও বই লিখেছিলেন ‘ব্যারিস্টার পাল’। সেই সব বই আইনজীবী মহলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিবেচিত হয়।
আইনজীবী মহলে বাচ্চু পাল বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। অনেকেই জানিয়েছেন, বিভিন্ন মামলায় জুনিয়র আইনজীবীদের এগিয়ে দিতেন তিনি। বর্তমান অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ‘কাকু’ বলে সম্বোধন করতেন সমরাদিত্য পাল। পারিবারিক সম্পর্ক ছিল তাঁদের। এজিও জানিয়েছেন, জুনিয়র হিসেবে কাজ শুরু করার সময় সমরাদিত্যবাবু তাঁকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। আইনজীবী নিঃসন্তান ছিলেন। তবে তাঁকে সর্বদাই ঘিরে থাকতেন জুনিয়র আইনজীবীরা।