কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি-সিবিআই। গ্রেফতারও হয়েছেন অনেকে। তালিকায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে একাধিক শিক্ষাকর্তা। আর এসবের মধ্যে কি এবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করল রাজ্যের স্কুলগুলিতে? সূত্র বলছে, রাজ্যে ৮ হাজারেরও বেশি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ জনেরও কম। কলকাতার বেশ কয়েকটি এলাকায় পুরসভার স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় শূন্য। এমন অবস্থায় স্কুল বিল্ডিংগুলির ভবিষ্যৎ কী? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে রাজ্যে শিক্ষা মহল। এমন স্কুলগুলি কি আগামী দিনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে? জোর জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিলেন ঢাকুরিয়া শ্রী রাম ইনস্টিটিউশনে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল পেল্লাই বিল্ডিং। কিন্তু পড়ুয়ার সংখ্যা? সর্বসাকুল্যে মেরে কেটে ৩০ জন। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের হিসেব বলছে, প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পড়ুয়াই ভর্তি হয়নি। তবে শিক্ষক আছেন ২ জন। স্কুলের উপরতলায় যাওয়ার দরজা খোলা হয় না বেশ কয়েক মাস ধরে। এই রকম স্কুল জেলায় জেলায় আরও ছড়িয়ে রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এদিকে পুরসভার বেশ কিছু স্কুলের হাল আরও খারাপ।
পরিকাঠামো আছে। বিল্ডিং আছে। কিন্তু পড়ুয়ার সংখ্যা এমন বেহাল কেন? শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের জেরে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের ভাবাবেগে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এর পাশাপাশি আরও একটি তত্ত্ব উঠে আসছে। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রথম থেকেই পড়ুয়ারা ও অভিভাবকরা সিবিএসই বা আইসিএসই বোর্ডগুলিকে বেছে নিচ্ছেন। আর তার প্রভাব পড়ছে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে। এমন অবস্থায় পুরসভার তরফে সেই স্কুলগুলিকে মডেল ইংরেজি স্কুল হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবছে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকারের সঙ্গেও। তিনি বলছেন, ‘এর পিছনে দুটি কারণ রয়েছে। যত মানুষের আয় বাড়ছে, তত মানুষের মধ্যে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলিতে ভর্তির প্রবণতা বাড়ছে। এর পাশাপাশি গত প্রায় এক দশকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেন্দ্রকে যে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে, তা নিয়ে লাগাতার রাস্তায় আন্দোলন চলছে। আদালত থেকে বিভিন্ন নির্দেশ আসছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। ফলে অভিভাবকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। যে সেক্টরে এত অভিযোগ উঠছে, সেখানে অভিভাবকদের একাংশ ছেলেমেয়েদর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য নিয়ে যেতে চাইছেন না।’
শিক্ষক সংগঠনের নেতা স্বপন মণ্ডল বলছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ছে। এতগুলি স্কুল যদি আগামী দিনে উঠে যায়, তাহলে ঘুরপথে বেসরকারিকরণকেই উৎসাহিত করা হবে।’
অপর এক শিক্ষক নেতা কিঙ্কর অধিকারীও বলছেন, ‘এর দায় সরকারি নীতিকে অবশ্যই নিতে হবে। এই স্কুলগুলিকে কোনওভাবেই বন্ধ করা চলবে না। প্রয়োজনে কিছু স্কুল বাংলা মাধ্যম রেখে বাকিগুলিকে ইংরেজি মাধ্যম করা হোক।’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও। তিনি বলছেন, এই স্কুলগুলির পুরনো হাল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। বললেন, ‘এগুলিকে মডেল স্কুল করে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পরিণত করার চিন্তা ভাবনা চলছে।’
রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করে রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যে কয়েক হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার উপর ছাত্র ও অভিভাবকদের আর আস্থা নেই। পিছনের দরজা দিয়ে বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছে। শিক্ষার মান নেমেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা তৃণমূল ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা চাই, ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে অন্তত নিয়োগ শুরু করুন মুখ্যমন্ত্রী।”