কলকাতা: তৃণমূলের বীরভূম জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি সরব হলেন শতাব্দী রায়। বৃহস্পতিবার রাতে শতাব্দীর একটি ফ্যান পেজে প্রথম ‘বেসুর’ শোনা গিয়েছিল। শুক্রবার শতাব্দী রায় নিজেই বললেন, বীরভূম জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সমস্যার কথা। সূত্রের খবর, দলের প্রতি অসন্তোষের কারণে তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদ থেকেও ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। কার প্রতি অসন্তোষে এতটা কঠোর হচ্ছেন শতাব্দী তা নিয়ে মুখ খোলেননি বীরভূমের সাংসদ। তবে সে জেলায় শেষ কথা যেহেতু অনুব্রত মণ্ডলই বলেন, শতাব্দীর অভিযোগের দিশা সেদিকেই বলে মনে করছে দলের একাংশ। তবে শতাব্দী জানিয়েছেন, “শনিবারের মধ্যেই আমার সিদ্ধান্ত জানাব। আর তো একটা দিন। একটু অপেক্ষা করুন।”
আরও পড়ুন: শতাব্দীর বিষয় দল দেখছে বললেন সৌগত, দিলীপ জানিয়ে রাখলেন স্বাগত
এদিন TV9কে শতাব্দী জানান, প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। পিকে বরং তৃণমূলকে ‘এনার্জি’ জুগিয়েছে। তবে জেলা নেতাদের কেউ কেউ তাঁকে চাইছেন না বলেই তোপ বীরভূমের সাংসদের। এ প্রসঙ্গে অনুব্রতর প্রসঙ্গ তোলা হলে অবশ্য, শতাব্দী বলেন, “আমি কারও নাম নিতে চাই না। যে এটা করছেন তিনি ভালই জানেন।”
শতাব্দী-অনুব্রতর ‘দ্বন্দ্ব’ ইতিমধ্যেই একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। কলকাতার শীর্ষনেতৃত্বের হস্তক্ষেপে এতদিন তা রাখঢাক থাকলেও এবার বোধহয় আর চুপ থাকবেন না তিনি। এদিন TV9কে শতাব্দী স্পষ্ট জানিয়েছেন, সাংসদ হিসাবে তিনি ১০০ শতাংশ কাজ করেছেন। সংসদেও তাঁর স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু জেলায় বারবার তাঁর কাজের পরিসরে ঢুকে বিরক্ত করা হচ্ছে। দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে ডাকাও হয় না। এই নিয়েও তাঁর মধ্যে জমেছে ক্ষোভের পাহাড়।
তবে কি এবার শতাব্দীও পদ্মাসনে বসতে চলেছেন? এ জল্পনা হেসে ওড়ালেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ। বললেন, “এখন কেউ কিছু বললেই বিজেপির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেরকম কিছুই এখনও আমি ভাবিনি।” তবে কি এবার রাজনীতি থেকেই সরে দাঁড়াবেন? শতাব্দীর জবাব, “এখনও তো কিছুটা সময় রয়েছে। দেখুন না কী হয়।” শনিবারই সর্বসমক্ষে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন শতাব্দী।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বারবার ‘বহিরাগত’ বলে তোপ দেগেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা ‘বহিরাগত’, তা কখনওই মানতে নারাজ তৃণমূলের এই সাংসদ। শতাব্দী রায় বলে, “প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোটা দেশের। তাঁরা বহিরাগত হবেন কীভাবে? আমরাও তো অন্য জায়গায় যাই। কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছি। আসলে মানুষ আপন ভাবছে কি না সেটাই কথা। যে কেউই বাংলায় আসতে পারেন।”
শতাব্দী রায় মনে করেন, “তৃণমূলের বিকল্প শুধুই বিজেপি এমনটা নয়। তবে এই মুহূর্তে আর কোনও অপশনও নেই। কংগ্রেস, সিপিএমের তো সেই হাল নেই যে লড়াই করবে। সমানে সমানে লড়তে পারবে একমাত্র বিজেপিই।” অর্থাৎ বাংলায় যে বিজেপির মাটি শক্ত হয়ে গিয়েছে পরোক্ষভাবে তা মেনে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সৈনিক।
সারদা কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল শতাব্দী রায়েরও। ২০১৯ সালে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিসও পাঠায় ইডি। এদিন শতাব্দীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তৃণমূল ভাঙনের অন্যতম কারণ কি ইডি, সিবিআই। আপনার উপর কি এরকম কোনও চাপ আছে। শতাব্দীর বক্তব্য, “আমার সঙ্গে এমন হয়নি। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরাও যে এ কারণেই গিয়েছেন তা তো জানি না। অন্য কারণেও তো যেতে পারেন। হতেই পারে অন্য কারণে তাঁরা দল ছেড়েছেন।”
ইদানিং দল ছাড়ার আগেই নেতা, মন্ত্রীদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ছেন তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। তবে শতাব্দী কিন্তু উল্টো কথাই শোনালেন। তাঁর কাছে প্রশান্ত কিশোর দলের জন্য ভাল কাজই করছেন। ‘হোম ওয়ার্ক’ দিচ্ছেন, নেতাদের মাঠে নামাচ্ছে। শতাব্দীর কথায়, “উনি এসে কত কাজ দেন। হোম ওয়ার্ক দেন স্কুলের মতো। দলের লোককে সবসময় ব্যস্ত রাখেন। এটা তো ভালই।”
প্রথমে দলের বিরোধিতা, তারপর আস্তে আস্তে দলের সমস্ত পদ থেকে সরে দাঁড়ানো। শেষে দলটাই ছেড়ে দেওয়া। গত কয়েকদিনে বঙ্গ রাজনীতিতে শাসকদলের ক্ষেত্রে এমনটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কি শতাব্দী রায়ও সে পথেই হাঁটবেন। বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ বলছেন, “এখন কিছু হলেই সকলে ধরে নিচ্ছেন বিজেপিতে যাবে। আমি এরকম কিছুই ঠিক করিনি।” রাজনীতি থেকে ‘সন্ন্যাস’ নিতে পারেন, জিইয়ে রেখেছেন সে জল্পনাও। বারবারই বলেছেন, “হাতে একদিন তো সময় রয়েছেই। দেখি কী করি।”