কলকাতা: সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের শপথের আগেই তাঁকে নিয়ে বিস্ফোরক স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বায়রন তৃণমূলেই আছেন, স্পিকারের মন্তব্য ঘিরে জল্পনা তৈরি হয় রাজনৈতিক মহলে। সূত্রের খবর, এই বক্তব্যে চরম ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। স্পিকার বলেছিলেন, “ওদের বিধায়কই স্বীকার করছেন, যে আমি তো তৃণমূলেরই লোক, তৃণমূলের ভোটেই আমি জিতেছি। সুতরাং যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই তৃণমূলের সমর্থক, তৃণমূলেই আছেন। হতে পারে আমাদের প্রার্থী নির্বাচনে কোনও ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। তার জন্য তৃণমূলের ভোটটা ওইদিকে চলে গিয়েছে।” স্পিকারের এই মন্তব্য ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে।
সাগরদিঘিতে জিতে বিধানসভায় পা রেখেছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস নেতা বায়রন বিশ্বাস। সাগরদিঘির এই ফল বর্তমানে শাসকদলকে তাঁদের স্ট্র্যাটেজি বদলাতেই বাধ্য করেছে, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই। সাগরদিঘির ফল ঘোষণার পর খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, বিজেপি-র থেকে সাহায্য নিয়ে জিতেছেন বায়রন। অথচ স্পিকার আবার বলছেন অন্য কথা। রবিবার প্রথমবার বিধানসভায় পা রাখেন বায়রন। একদিনে অসীত বিশ্বাস অন্যদিকে, নেপাল মাহাতোকে সঙ্গে নিয়ে বিধানসভায় ঢোকেন তিনি। দেখা করেন অধ্যক্ষের সঙ্গেও। তাঁর আর্শীবাদ নেন।
রবিবার এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির কাছে বায়রন বিশ্বাস বলেন, “বিজেপি নয়, তৃণমূল থেকেই সমর্থন পেয়েছি। আমি তৃণমূলেরই লোক।” বায়রন বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা হয়, শূন্যের গেঁরো কাটিয়ে জোটের বিধায়ক। সে প্রসঙ্গে বলেন, “দায়িত্ব আমি নেব। মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা পালন করব। বিধানসভায় সেই সমস্যাগুলো তুলে ধরব।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বিধানসভায় এত তৃণমূলের বিধায়ক, ডাকছেন আপনাকে, যাবেন না তৃণমূলে? উত্তরে বায়রন বলেন, “আমি আসলে তৃণমূলেরই লোক। তৃণমূলই আমাকে সাপোর্ট করেছে ভালভাবে। তৃণমূল সাপোর্ট না করলে তো সম্ভব ছিল না। ওরা বলছে বিজেপি সাপোর্ট করেছে, আমি বলব বিজেপি না, ম্যাক্সিমাম সাপোর্টটা তৃণমূল করেছে। তৃণমূলেরই লোক আমি।” কিন্তু তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বামেদের সমর্থন, কংগ্রেসের প্রতীকে জিতেছেন, তারপরও বলছেন তৃণমূলের লোক? সহাস্য মুখে বায়রন জবাবও দিয়েছিলেন, “ওঁরা এখন বলছে, আমি তৃণমূলে চলে যাব। আমাকে মন্ত্রিত্ব দেবে। এসব বলছে। তো আমার আর আলাদা করে কী বলার আছে। তাই আমি বলছি আমি তৃণমূলের লোক। তাহলে হয়তো বক্তব্যটা এখানেই শেষ হবে।”
২২ হাজার ৯৮০ ভোটে সাগরদিঘিতে জিতেছেন বায়রন। জোটের শর্ত মেনে তাঁকে সমর্থন জুগিয়েছেন বামেরাও। তাঁর এই জয় রীতিমতো বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণকে ওলটপালট করে দিয়েছে। বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া কংগ্রেসকেও ফিরে এনেছেন তিনিই। এখন তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েই বঙ্গ রাজনীতিতে টানাপোড়েন। সাংবাদিক সম্মেলন করবেন বায়রন। হয়তো সেখানেই নতুন করে উত্থাপিত হওয়া এই প্রসঙ্গের অবসান ঘটবে।