নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবারই আদালতে পেশ করা হচ্ছে প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে তোলা হচ্ছে তাঁকে। অন্যদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে হেফাজতে নিতে চেয়ে সিবিআই যে আবেদন জানিয়েছে, তার ভিত্তিতে এ দিনই আদালতে পেশ করা হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রীকেও।
সিবিআই হেফাজতের পর এবার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। জোকার এই হাসপাতালে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা করানো হবে।
সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হল পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে থাকবেন তিনি। সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কল্যাণময়কে। তাঁদের দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
আদালত থেকে বেরনোর সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘মরে যাব’। আদালতে সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষ। রায়দান স্থগিত।
কাঁদো কাঁদো গলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘আমি সব শুনলাম। মামলাগুলিতে আমার কী ভূমিকা? আমি মন্ত্রী ছিলাম। এসএসসি, প্রাইমারি বোর্ড নিজেরাই কাজ করত। তারা সবাইকে নিয়োগ করত। আমার কোনও ভূমিকা নেই। আমি শিক্ষিত, ইকনমিক্স নিয়ে পড়েছি, এমবিএ করেছি, আমার কাকার নাম শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এখন আরও এক সংস্থা নতুন করে তদন্ত করতে চাইছে। আমি খুবই অসুস্থ। কে সাহায্য করবে? আপনি আপনার মতো বিচার করবেন। আপনার কাছে বিচারের আশায় আছি।’
কল্যাণময়ের তরফে আদালতে দাবি করা হয়েছে, কোন সই তাঁর করা নয়। স্ক্যান করা সই। কোনও পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ নিতেন। পরীক্ষা নিত এসএসসি। এসএসসি-র রেকমেন্ডেশন ছাড়া কিছু হত না বলে উল্লেখ করলেন আইনজীবী।
আরও দাবি করা হয়, কল্যাণময় অভিজাত পরিবারের ছেলে। কোনও ষড়যন্ত্রের কথা জানা নেই, তাও গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সম্পত্তি বা টাকা নেওয়ার অভিযোগ নেই বলেও দাবি। অবসরের পর ওই পদ পেয়েছিলেন। ৭০ বছর বয়স বলে উল্লেখ করে জামিনের আবেদন জানালেন আইনজীবী।
পার্থর আইনজীবীর দাবি, পার্থ কোথাও যাবেন না, তদন্তে সহযোগিতা করবেন। ৭০ বছর বয়স, শারীরিকভাবেও অসুস্থ। তাঁকে জামিন দিলেও তদন্তে কোনও সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করলেন আইনজীবী।
আর সিবিআই-এর দাবি, এখানে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন। তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত করবে মূল চক্রীকে খুঁজে বের করতে। বৃহত্তর স্বার্থে পার্থে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সিবিআই।
দুর্নীতি মামলায় বিচারকের প্রশ্ন, মন্ত্রীর কি কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই? পার্থর আইনজীবীর পাল্টা প্রশ্ন, মন্ত্রীর পিছনে কিছু হলে তিনি কী করবেন? তিনি বলেন, ‘সমাজে ওঁর দায়বদ্ধতা প্রমাণিত, অভিযোগ প্রমাণিত নয়।’
পার্থর আইনজীবি বলেন, ‘অনেক কম সময়ে আমাদের বলা হয়েছে হাজির হতে। আমরা এটা জানি না কোন মামলায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। আমরা কোনও নথি পাইনি।’
বিচারক শেখ কামালুদ্দিন বলেন, ‘সিবিআই তাঁকে পাওয়ার জন্য একটা আবেদন করেছে। তাই হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।’
পার্থর আইনজীবির দাবি, এটা ইডি ও সিবিআইয়ের চক্রান্ত। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে ইডির চার্জশিট দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে, আর ইডি সেই চার্জশিট দিতে ব্যর্থ হবে বলে দাবি করে আইনজীবী বলেন, তাই সিবিআই এত তাড়ায় আছে।
কল্যাণময়কে সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করল সিবিআই।
পার্থর আইনজীবী সেলিম রহমানের দাবি, বৃহস্পতিবার থেকে সিবিআই-এর আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তাদের খুব তাড়া আছে। তিনি জানান, আর কয়েকদিন পরই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির ৬০ দিন সম্পন্ন হবে। ইডি তাদের চার্জশিট দিতে ব্যর্থ হলে জামিন পাবেন না পার্থ। আইনজীবীর প্রশ্ন, আগে যখন তিন বার গিয়েছেন পার্থ, সন্দেহ থাকলে তখন কেন গ্রেফতার করা হয় নি?
সিবিআই-এর জবাব, গ্রুপ সি সংক্রান্ত মামলায় তাঁকে সিবিআই ডাকেনি। গ্রুপ ডি মামলায় ডাকা হয়েছিল।
পার্থর আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, অফিস যখন একই, যদি হাইকোর্টের নির্দেশেই ডাকা হয়ে থাকে তাহলে অন্য মামলার আইও-কে কেন জিজ্ঞাসা করা হল না? ডাকার পরে তদন্তে আর কী অগ্রগতি হয়েছে?
সিবিআই জানিয়েছে, গ্রুপ সি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই অনেক তথ্য পেয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৬-তে কমিশন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০১৭-তে ফল প্রকাশ হয়। ২০১৯-এ সেই প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়। স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পার্থকে হেফাজতে চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে সিবিআই।
আদালতে সিবিআই দাবি করেছে, ২০১৯ সালে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়। এরপরই শুরু হয় দুর্নীতি। যোগ্যতা ছাড়াই ৪০০ জনেপ সুপারিশ করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিবিআই-এর তরফে। আইনজীবী বলেছেন, ‘ওই সময় মন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যিনি মূল চক্রী ছিলেন, মাস্টারমাইন্ড।’ শুধু তিনি একা নন আরও কয়েকজন তাঁকে সাহায্য করেছে বলেও দাবি তদন্তকারী সংস্থার। সিবিআই বলেছে, ‘তিনি মূল আর্কিটেক্ট ছিলেন।’
পার্থকে আদালতে আনার কিছুক্ষণ পরই আলিপুর কোর্টে আনা হল প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। একই বেঞ্চে পার্থর পাশেই বসলেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, তাঁদের দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার আবেদন জানাতে পারে সিবিআই।
পার্থ আইনজীবী সেলিম রহমান আদালতে জানান, এই মামলায় তিন বার ডাকা হয়েছে পার্থকে। তিনি গিয়েছেন। ইডি তদন্তও করছে। সিবিআই-এর দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে পার্থকে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন রয়েছে।
আদালতে পার্থের আইনজীবী দাবি করলেন, কেন এখানে আনা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি পার্থকে। এখানে আনার কোনও প্রয়োজনীয়তা ছিল না বলে দাবি করেছেন আইনজীবী।
ইডির যে মামলা চলছে, তার শুনানিতে গত কয়েকবার ভার্চুয়ালি হাজিরা দিতে হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সশরীরে হাজিরার আবেদন জানানো হলেও তা খারিজ হয়ে যায়। তবে এ দিন সিবিআই-এর মামলায় সশরীরে হাজির হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি জেল থেকে তাঁকে আলিপুর কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।