কলকাতা: আর্থিক অনটনের গেঁরোয় থমকে রোগীর হৃদস্পন্দনই! রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এর বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক অভিযোগ। রোগীর শরীরে নিম্ন মানের পেসমেকার ব্যবহারের অভিযোগ। আর এর দরুণ একাধিক রোগীর প্রাণ সংশয় দেখা দেয় বলেও অভিযোগ উঠছে। TV9 বাংলার হাতে উঠে এসেছে এক্সক্লুসিভ তথ্য। উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা নবকুমার দোলুই গত সেপ্টেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন, সেসময়ে তাঁর বুকে পেসমেকার বসানো হয়। চলতি বছরের এপ্রিলেই আবার নবকুমারের বুকে বসানো সেই পেসমেকার বিকল হয়ে যায় বলে অভিযোগ। তারপর তাঁকে ১৮ দিন ভর্তি রাখা হয়। তখন আবার দ্বিতীয় পেসমেকার বসানো হয়। অভিযোগ, সেই দ্বিতীয় পেসমেকারও আবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিকল হয়ে যায়। গোবরডাঙার বাসিন্দা জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতাও একই রকম।
এসএসকেএম-এ গিয়েই দেখা মিলল উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা নবকুমারের। তাঁর অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। তাঁর বক্তব্য, “একবার খারাপ হল ঠিক আছে, দ্বিতীয়বার বসানোর পর কীভাবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খারাপ হয়ে গেল? শেষে আমি আমার ছেলেকে বললাম, আমাকে অন্তত এখান থেকে নিয়ে চল। কতবার বুক কাটব? যে মেশিনই দিক, তা বসিয়ে নিয়ে যা আমাকে। খুবই বাজে অভিজ্ঞতা।”
নবকুমারের স্ত্রী বলেন, “চিকিৎসকরা বলছেন, আরও ভাল মেশিন রয়েছে। স্টেপ বাই স্টেপ আপনারা এগিয়ে যান। দরখাস্তও করা হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে হেনস্থা হলাম।”
TV9 বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন আরেক রোগী জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয় সমীর মল্লিকও। তিনি বলেন, “নিম্ন মানের মেশিন। এক বছরের মধ্যে দু’বাক ব্যাটারি চেক করতে হল।”
শুধু তাই নয়, পেসমেকার বসানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বিকল হয়ে রোগী মৃত্যুরও অভিযোগ উঠছে। গত বছর মে মাসে হরেকৃষ্ণ মণ্ডল নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে এই কারণেই। তাঁর বুকে পেসমেকার বসানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই তা বিকল হয়ে যায়। হৃদস্পন্দন থেমে যায় হরেকৃষ্ণের। সেই অভিযোগও সামনে এসেছে সম্প্রতি। পেসমেকার বিকল হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা আহমেদ খানেরও। TV9 বাংলার হাতে এসেছে এক্সক্লুসিভ নথিও।
যদিও এসএসকেএমের বক্তব্য, আগে যে পেসমেকার বসানো হত, তার দাম ছিল ৭০-৮০ হাজার টাকা। চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করছেন, আর্থিক টানাটানির জেরে গত এক বছর ধরে ৩০ হাজার টাকা দামের সিঙ্গল চেম্বর পেসমেকার বসানো হচ্ছে। তাতেই বিপত্তি বলে সূত্রের খবর। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকদেরই অভিযোগ, প্রত্যেক মাসেই রোগীর বুকে পেসমেকার বসানো হয়। আর তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বুকেই নিম্নমানের পেসমেকার বসানো হয়।
এ প্রসঙ্গে কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, “সঙ্গে সঙ্গেই যদি কোনও সমস্যা হয়, তাহলে সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাটারি সংক্রান্ত। আর ব্যাটারি যদি খারাপ হয়, তাহলে কিন্তু পেসমেকার আর কাজ করবে না। সেটা অনেকসময়ে টেবিলে থেকেই বোঝা যেতে পারে। আবার অপারেশনের বেশ কিছু সময় পরেও বোঝা যেতে পারে। এটাকে আমরা বলি আর্লি ব্যাটারি ফেলিওর। তবে এই কেস কিন্তু সাধারণভাবে খুব বেশি পাওয়া যায় না। নিশ্চিত ভাবে পেসমেকার নিম্নমানের হলে নতুন লাগাতে হবে।” স্বাভাবিকভাবেই চমকে ওঠার মতো অভিযোগ। TV9 বাংলার এক্সক্লুসিভ এই খবর সম্প্রচারিত হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে কিনা, সেদিকে নজর থাকবে।