সংকীর্ণতার উর্ধ্বে, নেতাজী এক আন্তর্জাতিক বাঙালি

সৌরভ পাল |

Jan 23, 2021 | 7:34 PM

‘একজন মানুষ একটি আদর্শের জন্য মৃত্যু বরণ করতে পারে। কিন্তু সেই আদর্শ তাঁর মৃত্যুর পরও হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে।’

Follow Us

উচ্চতা ৫ ফুট ৮। পরনে বেশিরভাগ সময়ই থাকত সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি। সঙ্গে অবশ্যই থাকত শাল। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। ছাত্রাবস্থা থেকে কংগ্রেসি রাজনীতি, তারপর কলকাতার মেয়র হওয়া পর্যন্ত, এটাই ছিলেন ট্রেড মার্ক সুভাষ (Subhas Chandra Bose)। পরে অবশ্য সময়ের দাবি মেনেই নিজের বদল ঘটিয়েছিলন কটকের বসু পরিবারের বিপ্লবী সন্তান।

স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায় না, ছিনিয়ে নিতে হয়

‘স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায় না, ছিনিয়ে নিতে হয়’। এই বোধই বাঙালি সুভাষের পরিচয় বদলে উন্মেষ ঘটিয়েছিল বিপ্লবী সুভাষের। ছেড়েছিলেন সাদা ধুতি, পাঞ্জাবি আর শাল। বদলে বেছে নিয়েছিলে খাকি উর্দি।

লেখাপড়ার প্রাথমিক পাঠ ক্রিশ্চিয়ান মিশনারি স্কুলে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়ার পর ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। আর সেটাই ছিল সুভাষের জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। ভারতীয় ছাত্রদের প্রফেসর ওটেনের তিরস্কার! বিদ্রোহের সেই শুরু। এরপর ঘটনা প্রবাহ এবং সময়ের ডাকেই সুভাষ হয়ে উঠলেন নেতাজী। আর এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে তিনি ছিলেন আগা গোড়াই জাতীয়তাবাদী, স্বদেশী এবং এক আন্তর্জাতিক মানের বাঙালি।

আজাদি-র ডাক

সেই সময় স্রেফ বাংলা ও বঙ্গ জাতিতে আবদ্ধ না থেকে, সুভাষ স্বপ্ন দেখলেন স্বাধীন ভারতের। ডাক দিলেন ‘আজাদি’-র। আর তার এই ডাকে তিনি যেমন সঙ্গে পেলেন রাসবিহারী বসুকে, তেমনই তাঁর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের জন্য পাশে পেয়ে গেলেন আবিদ হাসান, লক্ষ্মী সেহগলের মতো সেনানীকেও।

প্রাক স্বাধীনতা পর্বে সুভাষ চন্দ্র বসু প্রথম ভারতীয়, যিনি ভারতীয়দের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’। সেখানে বাঙালি সংকীর্ণতার কোনও স্থান ইতিহাসে অন্তত খুঁজে পাওয়া যায় না।

জাপানের সহায়তায় তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি, যা পরিচিত আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও। যাদের এক এবং অভিন্ন লক্ষ্যই ছিল ‘আজাদি’।

কারা ছিলেন এই ফৌজে?

মোহন সিং ছাড়াও স্বরাজ-এ বিশ্বসী নেতাজী ফৌজ-এ ছিলেন জগন্নাথ রাও ভোসলে, শাহ নওয়াজ খান, পি কে সেহগাল সহ হাবিবুর রহমানের মতো নেতৃ্ত্বরা। আরও বাঙালি কর্নেল এসি চ্যাটার্জির মতো বাঙালিও।

এখানেই কি শেষ? না একেবারেই নয়। পরাধীন ভারতের প্রথম স্বশাসিত সরকার, যার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। সুভাষের সেই মন্ত্রিসভায় এসি চ্যাটার্জির নাম যেমন ছিল, তেমনই ছিল লক্ষ্মী স্বামীনাথন, এ ম সহয়, এস এ আইয়ার, করিম জিয়ানি, সর্দার ঈশ্বর সিং, ডি এম খান, এম ইয়েলাপ্পা সহ দেবনাথ দাসের মতো ব্যক্তিত্বরা।

সুভাষের সরকার, স্লোগান ছিল জয় হিন্দ

সুভাষের গড়া সরকারের স্লোগান ছিল ‘জয় হিন্দ’। আদর্শ ছিল – বিশ্বাস, একতা এবং আত্মত্যাগ। এমনকি গোটা ভারতকে এক সুতোয় বাঁধতে রবীন্দ্রনাথের জন গণ মন-র ভাষান্তর করিয়ে সুভাষ সৃষ্টি করেছিলেন ‘শুভ সুখ চেন’। এই গানের ভাষান্তর করেছিলেন আবিদ হুসেন।

নেতাজী বরাবরই মনে করতেন, ‘একজন মানুষ একটি আদর্শের জন্য মৃত্যু বরণ করতে পারে। কিন্তু সেই আদর্শ তাঁর মৃত্যুর পরও হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে।’ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই আদর্শেই তিনি বেঁচেছেন এবং এই আদর্শকেই ভারতবাসীর পাথেয় করে গিয়েছেন।

 

 

 

উচ্চতা ৫ ফুট ৮। পরনে বেশিরভাগ সময়ই থাকত সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি। সঙ্গে অবশ্যই থাকত শাল। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। ছাত্রাবস্থা থেকে কংগ্রেসি রাজনীতি, তারপর কলকাতার মেয়র হওয়া পর্যন্ত, এটাই ছিলেন ট্রেড মার্ক সুভাষ (Subhas Chandra Bose)। পরে অবশ্য সময়ের দাবি মেনেই নিজের বদল ঘটিয়েছিলন কটকের বসু পরিবারের বিপ্লবী সন্তান।

স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায় না, ছিনিয়ে নিতে হয়

‘স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায় না, ছিনিয়ে নিতে হয়’। এই বোধই বাঙালি সুভাষের পরিচয় বদলে উন্মেষ ঘটিয়েছিল বিপ্লবী সুভাষের। ছেড়েছিলেন সাদা ধুতি, পাঞ্জাবি আর শাল। বদলে বেছে নিয়েছিলে খাকি উর্দি।

লেখাপড়ার প্রাথমিক পাঠ ক্রিশ্চিয়ান মিশনারি স্কুলে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়ার পর ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। আর সেটাই ছিল সুভাষের জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। ভারতীয় ছাত্রদের প্রফেসর ওটেনের তিরস্কার! বিদ্রোহের সেই শুরু। এরপর ঘটনা প্রবাহ এবং সময়ের ডাকেই সুভাষ হয়ে উঠলেন নেতাজী। আর এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে তিনি ছিলেন আগা গোড়াই জাতীয়তাবাদী, স্বদেশী এবং এক আন্তর্জাতিক মানের বাঙালি।

আজাদি-র ডাক

সেই সময় স্রেফ বাংলা ও বঙ্গ জাতিতে আবদ্ধ না থেকে, সুভাষ স্বপ্ন দেখলেন স্বাধীন ভারতের। ডাক দিলেন ‘আজাদি’-র। আর তার এই ডাকে তিনি যেমন সঙ্গে পেলেন রাসবিহারী বসুকে, তেমনই তাঁর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের জন্য পাশে পেয়ে গেলেন আবিদ হাসান, লক্ষ্মী সেহগলের মতো সেনানীকেও।

প্রাক স্বাধীনতা পর্বে সুভাষ চন্দ্র বসু প্রথম ভারতীয়, যিনি ভারতীয়দের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’। সেখানে বাঙালি সংকীর্ণতার কোনও স্থান ইতিহাসে অন্তত খুঁজে পাওয়া যায় না।

জাপানের সহায়তায় তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি, যা পরিচিত আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও। যাদের এক এবং অভিন্ন লক্ষ্যই ছিল ‘আজাদি’।

কারা ছিলেন এই ফৌজে?

মোহন সিং ছাড়াও স্বরাজ-এ বিশ্বসী নেতাজী ফৌজ-এ ছিলেন জগন্নাথ রাও ভোসলে, শাহ নওয়াজ খান, পি কে সেহগাল সহ হাবিবুর রহমানের মতো নেতৃ্ত্বরা। আরও বাঙালি কর্নেল এসি চ্যাটার্জির মতো বাঙালিও।

এখানেই কি শেষ? না একেবারেই নয়। পরাধীন ভারতের প্রথম স্বশাসিত সরকার, যার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। সুভাষের সেই মন্ত্রিসভায় এসি চ্যাটার্জির নাম যেমন ছিল, তেমনই ছিল লক্ষ্মী স্বামীনাথন, এ ম সহয়, এস এ আইয়ার, করিম জিয়ানি, সর্দার ঈশ্বর সিং, ডি এম খান, এম ইয়েলাপ্পা সহ দেবনাথ দাসের মতো ব্যক্তিত্বরা।

সুভাষের সরকার, স্লোগান ছিল জয় হিন্দ

সুভাষের গড়া সরকারের স্লোগান ছিল ‘জয় হিন্দ’। আদর্শ ছিল – বিশ্বাস, একতা এবং আত্মত্যাগ। এমনকি গোটা ভারতকে এক সুতোয় বাঁধতে রবীন্দ্রনাথের জন গণ মন-র ভাষান্তর করিয়ে সুভাষ সৃষ্টি করেছিলেন ‘শুভ সুখ চেন’। এই গানের ভাষান্তর করেছিলেন আবিদ হুসেন।

নেতাজী বরাবরই মনে করতেন, ‘একজন মানুষ একটি আদর্শের জন্য মৃত্যু বরণ করতে পারে। কিন্তু সেই আদর্শ তাঁর মৃত্যুর পরও হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে।’ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই আদর্শেই তিনি বেঁচেছেন এবং এই আদর্শকেই ভারতবাসীর পাথেয় করে গিয়েছেন।

 

 

 

Next Article