শঙ্খ ঘোষ শুধু ঠিকানা দিয়ে গিয়েছেন

arunava roy |

Apr 21, 2021 | 9:14 PM

যে কথাটা বলা দরকার সেই কথাটা উঠে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারতেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর গলায় কোনও কম্পন ছিল না। তিনি পরিষ্কার কথা পরিষ্কার ভাবে বলতে পারতেন। স্পষ্ট কথা বলতে পারার ক্ষমতা সবার থাকে না। তাঁর ছিল।

শঙ্খ ঘোষ শুধু ঠিকানা দিয়ে গিয়েছেন
শঙ্খ ঘোষের স্মৃতিচারণে সুবোধ সরকার

Follow Us

সুবোধ সরকার: প্রথম দিন থেকেই কবি হিসেবে শঙ্খ ঘোষ সামনের সারিতে উঠে এসেছিলেন। যখন তাঁর অল্প বয়স তখনই ‘যমুনাবতী সরস্বতী’ কবিতাটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ক্লাসে শোনা যেত। এমন সৌভাগ্য অন্য কোনও কবির হয়নি। পঞ্চাশের দশকে বাংলা কবিতা বাঁক নিয়েছিল। সেই বাঁক বাংলা সাহিত্যের এমন একটা বিশেষ অংশ যে, সেই অংশ সম্পর্কে এখনও গভীর পড়াশোনা চলছে। আমার মনে হয় পঞ্চাশের দশকে বাংলা কবিতায় অনেকগুলো বাঁক তৈরি হয়েছিল। একদিকে যেমন দুই মেরুর দুই কবি– শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁরা একেবারে বাংলা কবিতাকে জমিয়ে দিলেন। অন্যদিকে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও আলোক সরকার। তাঁরা একটা অন্যরকম পথ আবিষ্কার করলেন। আর এঁদের সবার থেকে একদম আলাদা একটা পথ তৈরি করলেন কবি শঙ্খ ঘোষ।

পঞ্চাশের দশকেও জীবনানন্দ দাশের এই কথা প্রমাণিত হয়েছিল যে, কবিতা অনেক রকম। একেক জন কবি একেকটা পথের ঠিকানা তৈরি করেন। একেক জন কবি একেকটা গন্তব্য তৈরি করেন। কিন্তু কবিতার কোনও গন্তব্য হয় না। শঙ্খ ঘোষেরও কোনও গন্তব্য ছিল না। তিনি শুধু আমাদের ঠিকানা দিয়ে গিয়েছেন। সেই ঠিকানা তাঁর কবিতার ভেতর, তাঁর প্রত্যেকটি বইয়ের ভেতর খুঁজে পাই। ‘দিনগুলি রাতগুলি’ থেকে শুরু করে একেবারে শেষ কাব্যগ্রন্থ পর্যন্ত তাঁকে যে ভাবে দেখে এসেছি, প্রতিটা বইয়ে তিনি নতুন করে বাঁক নিয়েছেন। নতুন করে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছেন।

যখন যে কথাটা বলা দরকার সেটা তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারতেন। বিহারে হোক, বাংলায় হোক, দিল্লিতে হোক বা মণিপুরের ঘটনা হোক– সব জায়গাতেই তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন কবিতার মধ্যে দিয়ে। তাঁর বন্ধু অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত মাত্র কিছুদিন আগে প্রয়াত হয়েছেন জার্মানিতে। তাঁরা অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু। একজন কলকাতায় থাকতেন, আরেকজন হির্শবার্গে। তা সত্ত্বেও তাঁর খুব কাছাকাছি ছিলেন। নভেম্বর মাসে বিন্ধুবিয়োগ ঘটেছিল তাঁর। কি আশ্চর্য! তিনিও বন্ধুর কাছে চলে গেলেন।

শঙ্খ ঘোষ শুধুমাত্র বাংলা ভাষার কবি ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় কবি। খুব বেশি কথা বলতেন না। শেষ জীবনে হয়ত শারীরিক কারণে কথা বলতে পারতে না। আগে যখন সুস্থ ছিলেন তখনও খুব কম কথা বলতেন। কিন্তু যে কথাটা বলা দরকার সেই কথাটা উঠে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারতেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর গলায় কোনও কম্পন ছিল না। তিনি পরিষ্কার কথা পরিষ্কার ভাবে বলতে পারতেন। স্পষ্ট কথা বলতে পারার ক্ষমতা সবার থাকে না। তাঁর ছিল। কবি হিসেবে তাঁকে আমার প্রণাম। একজন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবেও তিনি আমাদের আলো দিয়ে গিয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

Next Article