কলকাতা: মমতাকেও (Mamata Banerjee) ভোটে হারানো যায়? না, একথা বিশ্বাস করতেন না সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। Tv9 বাংলার স্টুডিয়োতে এসে একথা বলেছিলেন সদ্য় প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী। ‘৮৪ সালে যে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সুপারিশে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার পরে নির্বাচনী ইতিহাসে একরকম অজেয় হয়ে বিরাজ করেছেন, সেই মমতাই কিনা পরাজিত হলেন একদা তাঁর আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে! বিস্ময়বোধ করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বিজেপিতে যোগদানের অনতিপরে নন্দীগ্রামের তেখালির সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ঘোষণা করেছিলেন, ভবানীপুর তাঁর ‘বড় বোন’। ‘ছোট বোন’ নন্দীগ্রাম। এখানেই এবার ভোটে লড়বেন। ২০১৬-এর বিধানসভা ভোটের তখনও বাকি মাস দুয়েক। নন্দীগ্রামেই এক সভা থেকে তৃণমূলের প্রথম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিলেন মমতা। জানিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম থেকে লড়বেন শুভেন্দু অধিকারী।
কাট-টু। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন শুভেন্দু। তখন সেই নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েই প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর একসময়ের রাজনৈতিক সতীর্থের সঙ্গে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এবং শেষে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া শুভেন্দুর জয়লাভ দেড় হাজারের বেশি ভোটে। সেই ভোটের ফলাফল নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। কিন্তু সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Muykherjee) কি ভাবতে পেরেছিলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারতে পারেন? Tv9 বাংলায় ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছিলেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীদের বিরুদ্ধে-ও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি। কী বলেছিলেন?
একুশের ভোটে এই রকম জনসমর্থন নিয়ে জিতে আসার পরেও মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচিত করতে আবার ভোট করতে হবে এটা এক্সপেক্ট করতে পেরেছিলেন? ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে এই প্রশ্নের জবাবে সুব্রতবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন না। এটা যদি কেউ বলেন, ভেবেছিলেন? আমি বলব, ভাবিনি আমি। হয়ত মার্জিন কম হবে ভেবেছি। তবে আমার বিশ্বাস যে মুখ্যমন্ত্রীরা যেখানে ভোটে দাঁড়ান, তাঁরা টেকনিক্যাল একটা বিচার করিয়ে নেন। তার পর ঘোষণা করেন। তাই কোনওক্রমেই আমি ভাবিনি যে ওখানে কম ভোট হবে।”
তাহলে কি হোমওয়ার্কের অভাব ছিল কিছু? সুব্রতবাবু তা কার্যত মেনে নেন। বলেন, “অনেক কিছুর অভাব ছিল। হোমওয়ার্ক ছিল। যেভাবে ম্যানুপুলেশন হয়েছে বলে আমার ধারণা, অপজিশন যেভাবে ম্যানুপুলেশন করেছে, সেটা ফ্যাক্টর। যে বেআইনি কাজ হয়েছে সেটা ফ্যাক্টর। অনেক টাকা পয়সা হয়েছে, সেটাও ফ্যাক্টর। আবার দুটো সম্প্রদায় হাইলি পোলারাইজ়ড হয়েছে, সেটাও ফ্যাক্টর। যেখানে মাইনোরিটিজরা অনেক কম, মেজোরিটিরা অনেক বেশি। সেখানে আরও পোলারাইজ়ড হয়ে গিয়েছে। সামান্য ভোটের এদিক -ওদিক হয়েছে। সেটাও ফ্যাক্টর।” তাঁর আরও সংযুক্তি, “সব মিলিয়ে এটা হয়েছে কারণ, মমতা ব্যানার্জি ইনডিভিজুয়ালি কোনও জায়গা থেকে হেরে যাবে এটা আগে থাকতে বিশ্বাস করতে পারি না। পরে ঘটলে সেটা তো ঘটনা ঘটনা-ই।”
পঞ্চাশ বছরের পরিষদীয় জীবনে এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, এটা বোধহয় আগে ভাবেননি? প্রশ্নে মৃদু হাসলেন তিনি। তার পর সুব্রতবাবু বলতে থাকেন, “এরম হয়নি। তবে চিফ মিনিস্টাররা আর ভোটে দাঁড়াননি এটা হয়েছে। এমনকি সিদ্ধার্থ শংকর রায়ও দাঁড়াননি। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। হেরেও গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি তো আর দাঁড়াননি।”
তিনি যোগ করেন, “নন্দীগ্রামের লড়াইয়ের উপর নির্ভর করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জায়গা থেকে আমি ভাবতে পারিনি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো যাবে। হয়ত ভোটের পার্সেন্টেজটা কমবে।”
প্রথমে শুধু ভবানীপুর উপনির্বাচন ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। তাহলে তো একটা সঙ্কট থেকে বাঁচিয়ে দিল? এই প্রশ্নের উত্তরে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “যদি না করত তাহলে একটা সঙ্কট হত। না করার কোনও কারণ ছিল না। কারণ, এখানে করোনা-টা অনেক কমে গিয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন করতেই পারতেন। না করার তো একটা কারণ হতে পারে করোনা সংক্রমণ।”
তার পর অবশ্য ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জিতেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।