কলকাতা: সুজন চক্রবর্তীর (sujan chakraborty) স্ত্রী, এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ সি স্টাফ মিলি চক্রবর্তী নিজেও গণ আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁর বাবা শান্তিময় ভট্টাচার্যও ছিলেন জেলার দাপুটে সিপিএম নেতা। সেই মিলিদেবীর কলেজের চাকরি নিয়েই অভিযোগ তুলেছে শাসক দল তৃণমূল। প্রাথমিক থেকে এসএসসি- একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে যখন কার্যত কোণঠাসা তৃণমূল সরকার, তখন বাম আমলের নিয়োগ দুর্নীতির পাল্টা অভিযোগ তুলতে গিয়েই মিলি দেবীর নাম সামনে এনেছেন শাসক দলের নেতারা। সত্যিই কি চিরকুটে হয়েছিল চাকরি, অবসরের ২ বছর পর এমন অভিযোগে কতটা বিচলিত? TV9 বাংলার মুখোমুখি হয়ে সে কথা জানালেন দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের প্রাক্তন কর্মী মিলি চক্রবর্তী।
সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপন দেখে তিনি চাকরির আবেদন করেছিলেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে চিঠি দিয়ে জানায়, কবে ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে। ইন্টারভিউ বোর্ডে কারা থাকবেন, সেই নামও উল্লেখ করা হয়েছিল চিঠিতে।
প্রিন্সিপ্যালের ঘরে হয় ইন্টারভিউ। তারপর সিলেকশন হয়। তারপর নিয়োগ পত্র পান মিলি দেবী। সেই নিয়োগ পত্র প্রকাশ্যে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রিন্সিপ্যাল আমাকে ডেকে বলেছিলেন, আপনি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।’ মিলি চক্রবর্তী শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘সেই রেজাল্ট শিটটা তো আছে। সেটা বের করছেন না কেন? বের করলে কি ধরা পড়ে যাবেন?’
মিলি চক্রবর্তীর স্পষ্ট জবাব চিরকুটের কথা সর্বৈব মিথ্যা। তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটাই কথা বলে যাচ্ছি আমি কেন আত্মপক্ষ সমর্থন করব? যাঁরা চিরকুটের কথা বলছেন, তাঁরা প্রমাণ আনুন। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি।’
মিলি দেবীর উত্তর, ‘যখন চাকরি পাই, সেই সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড পড়ছিলাম। তারপর নানা কারণে পদোন্নতি নেওয়া হয়নি। আমি অনেক ছোট থেকে গণ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। দুজনেরই হোলটাইমার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাতে অসুবিধা হতে পারত, তাই আমি চাকরিটা করি।’
স্বচ্ছতায় নিজেকে ১০০ শতাংশ নম্বর দিচ্ছেন মিলি চক্রবর্তী। তবু শাসক দলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করছেন না তিনি। তাঁর কথায়, যাঁরা নোংরা ঘাঁটছে, তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করার ইচ্ছা বা সময় কোনওটাই তাঁর নেই।
তৃণমূল দাবি করেছে, বাম জমানার দুর্নীতির উল্লেখ রয়েছে ক্যাগ রিপোর্টে। সেই অভিযোগ সম্পর্কে বলতে মিলি চক্রবর্তী বলেন, ‘বাম আমলে বাম মনস্ক বেকার ছেলেরা চাকরি না পেয়ে গলায় প্লাকার্ড ঝুলিয়ে বলেছিল, চাকরি পাবে মেধা, আর ঝান্ডা ধরবে গাধা? এই মেধার ভিত্তিতে চাকরিই ছিল নাম আমলের নীতি।’
তবে এত বয়সে এসে এসব অভিযোগে বিচলিত নন মিলি দেবী। তিনি জানান, আবেগের দিক থেকে ভাবলে খারাপ লাগছে। তবে, তাঁর স্বামী সুজন চক্রবর্তী যেভাবে প্রত্যেকদিন বিরোধীদের অন্যায় অবিচারের কথা বলছেন তাতে তাঁদের দিকে অভিযোগ ঘুরে আসবে এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন তিনি।