কলকাতা: বঙ্গ বিজেপির অন্দরে বিরোধের আগুন অব্যাহত। সদ্যই বিজেপির দুই নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারিকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারপরেই সাংবাদিক বৈঠক করে কার্যত বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জয়প্রকাশ। এ বার, পরিচালন কমিটির রদবদল নিয়ে মুখ খুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder)।
সুকান্তর কথায়, ” জেলা কমি়টির কোনও ডেডলাইন নেই। আর সময়ে তো বদল আনতেই হবে। সেই মতোই কমিটিতে কিছু হেরফের করা হয়েছে। তাও কোভিডের জন্য আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। এর মধ্যে কোনও বার্তা দেওয়ার কিছু নেই। যা হওয়ার তাই হচ্ছে। রাজনীতিতে অনুগামী বলে কিছু হয় না। আগে দিলীপ ঘোষ সভাপতি ছিলেন। তখন আমরা সবাই তাঁর অনুগামী ছিলাম। এখন আমি সভাপতি। সবাই বিজেপির অনুগামী। পতাকার অনুগামী। কিছু করার নেই। মেনে নিতে হবে এটা।”
বস্তুত, বিজেপির নতুন পরিচালন কমিটির তালিকা সামনে আসতেই একের পর এক বিরোধিতা ঘোষণা করেছেন দলের নেতারা। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর থেকে শুরু করে পাঁচ বিধায়ক হোয়াটস্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন। বিক্ষুব্ধ নেতাদের একসঙ্গে বনভোজনেও দেখা গিয়েছে। এত বিক্ষোভের মধ্যেও ফের জেলা কমিটিতেও রদবদল শুরু করেছে পদ্ম শিবির। সম্প্রতি, কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌমেন্দু। নন্দীগ্রাম বিধায়কের ‘গুডবুক’-এর তালিকাভুক্তদের পদপ্রাপ্তি হচ্ছে বলে কানাঘুষো শুরু হয়েছে। পদ্ম শিবিরের অন্দরেও যা নিয়ে বিরোধের চাপা আগুন লক্ষ্য করা গিয়েছে।
খোদ জয়প্রকাশ মজুমদার সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিজেপিতে আট বছর রয়েছি। ২০১৫ সাল থেকে রাজ্য বিজেপিতে সহ-সভাপতির পদে আছি।” তাঁর মতে বাংলায় বিজেপির যে দ্রুতগতির উত্থান হয়েছে, তা অনেকেই ভালভাবে নিচ্ছেন না। বাংলার বিজেপিকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জয়প্রকাশের আরও অভিযোগ, কর্মীদের উপেক্ষা করছে নেতৃত্ব। বাংলায় বিজেপি কর্মীরা ভাল নেই। কোনও জেলা কমিটি আজও তৈরি হয়নি। বিক্ষোভ এড়াতে নেতাদের চুপ রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে তাঁর আক্রমণের নিশানায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বললেন, “মাত্র আড়াই বছর রাজনীতিতে এসেছেন সভাপতি। প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতারা আজ রাজ্য বিজেপিতে ব্রাত্য।”
শুধু জয়প্রকাশই নন, বিক্ষুব্ধদের একযোগে এনে শান্তনু ঠাকুর দাবি করেছেন, তিনি সকল বিক্ষুব্ধ নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। কতজনকে দল বরখাস্ত করবে। শান্তনুর দাবি, যদি ‘বেসুরো’ বেশি হয়, তবে সেটাই ‘সুর’। বস্তুত, বিজেপির অন্দরের সাংগঠনিক পরিকাঠামো নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও সেসব মানতে নারাজ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘পরিবর্তনের হাওয়ায় এমন একটু আধটু আওয়াজ হয়। তাতে কোন্দলের কিছু নেই। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ তবে কবে মিটবে পদ্ম-অন্দরের এই যুদ্ধ? প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট মহলের।
আরও পড়ুন: Bengal BJP: পদপ্রাপ্তি শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দুর, জেলা বিজেপিতেও ‘বিদ্রোহের আঁচ’!