কলকাতা: দু’সপ্তাহের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়ের দলত্যাগ সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করবেন। সোমবার এই মর্মে আশা প্রকাশ করল শীর্ষ আদালত। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ১৭ জানুয়ারির মধ্যে এই বিষয়টি শেষ করার কথা আগেই স্পিকারকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এখনও এই মামলার কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। সোমবার ফের সুপ্রিম কোর্টে মুকুল রায়ের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল।
১৪ জানুয়ারি মামলার শুনানি
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জানুয়ারি বিধানসভায় মুকুল রায়ের দলত্যাগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। সেদিন শুনানি চলাকালীন সমস্ত বিষয় বিধানসভা কর্তৃপক্ষ রেকর্ড করে। তবে সেই একই যুক্তি খাঁঁড়া করেছেন মুকুল রায়ের আইনজীবী। মুকুল অন্য রাজনৈতিক দলের মঞ্চে সৌজন্যের খাতিরে গিয়েছিলেন। তিনি কোনও রাজনৈতিক দল যোগ দেননি। মুকুল বিজেপিতেই আছেন। বিজেপিও মুকুল রায়কে সাসপেন্ড করেননি। অর্থাৎ বিষয়টির সারমর্ম, মুকুল রায় কোনওদিনও তৃণমূলে যোগই দেননি। সেক্ষেত্রে তাঁর দল পরিবর্তনের কোনও প্রশ্নই আসছে না।
বঙ্গ বিজেপির বক্তব্য
বঙ্গ বিজেপির সাংবাদিক বৈঠকে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ” পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির মামলার শুনানি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে । এই রাজ্যের পরিষদীয় ব্যবস্থাকে হাস্যকর করে তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদীয় গণতন্ত্রের পরম্পরা ভেঙে তৃণমূল চলছে। মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য সর্বতোভাবে ব্যবস্থা করবে বিজেপি।”
দলত্যাগ অভিযোগ মামলার প্রেক্ষাপট
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন মুকুল রায়। ভোটের পর তিনি ফের তাঁর পুরানো দল তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় বিজেপি। গত ১৭ জুন মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবি জানিয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এরইমধ্যে মুকুলকে পিএসি চেয়ারম্যান করা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অম্বিকা রায়।
মুুকুলের স্ববিরোধী কিছু বক্তব্য
তবে এদিনের শুনানিতে আইনজীবী সায়ন্তনের চাঞ্চল্যকর সওয়াল কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে ভীষণভাবে মুুকুল রায়ের বক্তব্যের বিরোধিতা করে। তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পর মুকুল রায় কৃষ্ণনগরের তৃণমূলের সাংগঠনিক সভায় গিয়ে বলেছিলেন, “ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে। এই কৃষ্ণনগরে স্বমহিমায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি। নিজের ক্ষমতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি।” পরক্ষণেই তিনি ভুল বুঝতে পারেন। তবে মুখ থেকে বেরিয়ে ‘বাণ’ তখন বেরিয়ে গিয়েছে। আর তার সাতদিন পরই আবার ‘ভুল’! তিনি বলেছিলেন, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে ফের প্রার্থী হলে তিনিই জিতবেন বিজেপির টিকিটে। তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালে কী হবে তা মানুষ ঠিক করবে! এই কথাটি আবার বলেছিলেন বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়েই।
মুকুল রায় একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। তাতে রাজনীতির বিশ্লেষকরা চাণক্য উপাধি দিয়েছেন। তাই চাণক্যর মস্তিষ্কপ্রসূত বিভিন্ন রাজনৈতিক ‘পাজল গেম’ তাঁর অবস্থান নিয়েই ধন্দ তৈরি করছে!
আরও পড়ুন: জ্বলছিল একের পর এক ঝুপড়ি, বের হতে পারেনি ওরা, ঘরেই ঝলসে শেষ খুদে প্রাণগুলো