কলকাতা ও কাঁথি: রাজ্য রাজনীতিতে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সবার নজর ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। আর এবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের মতোই হাইভোল্টেজ ময়দান হতে চলেছে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে তৃণমূলের হাতে। খাতায় কলমে এখনও সেখানে সাংসদ তৃণমূলেরই। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারী রয়েছেন কাঁথির সাংসদ হিসেবে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতীকেই প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শিশির অধিকারী তথা শান্তিকুঞ্জের সঙ্গে তৃণমূলের বাঁধন ক্রমেই আলদা হতে থাকে। শিশিরের বিরুদ্ধে সাংসদ পদ খারিজের মামলাও করেছে রাজ্যের শাসক দল। এমন অবস্থায় সোমবার শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, আগামীতে কাঁথি লোকসভা ২ লাখ ভোটে জিতবে বিজেপি।
ডিসেম্বরের শুরুতেই পূর্ব মেদিনীপুরে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভা করবেন কাঁথিতে। শান্তিকুঞ্জ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে হবে অভিষেকের সভা। আর তার আগেই শুভেন্দুর কাঁথি লোকসভা নির্বাচন নিয়ে এই হুঁশিয়ারি স্বাভাবিকভাবেই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। শুধু দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করাই নয়, এর পাশাপাশি কাঁথিতে অভিষেকের সভার আগে রাজ্যের শাসক শিবিরকে স্নায়ুর চাপে রাখার একটি কৌশলী চাল বলেও মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা। কারণ, পঞ্চায়েতের মুখে এখনও পর্যন্ত অভিষেককে সেই অর্থে বড় কোনও জনসভায় দেখা যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, অধিকারী-গড় কাঁথি থেকেই পঞ্চায়েতের প্রচারে ময়দানে নামতে চলেছেন তিনি। অভিষেকের সেই সভার আগে শান্তিকুঞ্জের হেভিওয়েট নেতার এই হুঁশিয়ারি এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোই মনে করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে কাঁথি দিয়ে। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। এখন তিনি নন্দীগ্রামের বিধায়ক। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরপরই তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীও পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তবে শান্তিকুঞ্জের দুই সাংসদ শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী এখনও খাতায় কলমে তৃণমূল শিবিরে, যদিও ঘাসফুল শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ নামমাত্রই রয়ে গিয়েছে। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কাঁথিতে কার্যত দাপট দেখিয়েছে বিজেপি শিবির।
দক্ষিণ কাঁথি ও উত্তর কাঁথি উভয়ই নিজেদের দখলে নেয় পদ্ম শিবির। দক্ষিণ কাঁথি থেকে বিধায়ক হন বিজেপির অরূপ দাস এবং উত্তর কাঁথিতে রয়েছেন পদ্ম-নেত্রী সুমিতা সিনহা। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন বিধানসভায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, “কাঁথি লোকসভাতে ৪৫ হাজার লিড বিজেপিতে আছে। এই জন্যই তো আমরা নরেন্দ্র মোদীকে কাঁথি লোকসভা আবার উপহার দেব ২ লাখ ভোটে। লিখে রাখুন।” যদিও বিধানসভা ভোটের পর পুরভোটের ক্ষেত্রে কাঁথিতে সেই তুলনায় দাপট দেখাতে পারেনি পদ্ম শিবির।
এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর এই হুঁশিয়ারিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। তাঁর বক্তব্য, শিশির অধিকারীর যত ভোটে জিতেছিলেন, সেই পরিসংখ্যান এবার ছাপিয়ে যাবে তৃণমূল। বললেন, “এর আগের লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। তার দুই বছর পর বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। সেই বিধানসভা নির্বাচনের নিরীখে, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে আমরা ২৮-২৯ হাজার ভোটে মাত্র পিছিয়ে আছি। তাতে ২ লাখ তো দূরের কথা, এক হাজার ভোটে হলেও বিজেপি জিততে পারবে না। আমরা গতবারের থেকেও অনেক বেশি ভোটে জিততে পারব। ওর বাবা জিতেছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ভোটে। সেটি আমরা ছাপিয়ে যাব। পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। কত ভোট আমি সঠিক বলতে পারছি না, তবে ওর বাবার থেকে অনেক বেশি ভোটে আমরা জিতব, এই কথা আমরা বলতে পারি।”
উল্লেখ্য, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের দখলে রয়েছে। এমনকী রাজ্যে রাজনীতিক পালাবদলের আগে থেকেই এই এলাকা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সেখান থেকে কাঁথি লোকসভা বিজেপির দিকে ছিনিয়ে আনার যে হুঙ্কার শুভেন্দু অধিকারী দিয়েছেন, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এখন দেখার হাইভোল্টেজ কাঁথির যুদ্ধজয় করতে কাকে প্রার্থী করে বিজেপি… তৃণমূল শিবিরই বা শিশিরের পরিসংখ্যান ছাপানোর জন্য কাকে দাঁড় করায়।