কলকাতা: নববর্ষের জন্য বঙ্গবাসীকে উপহার মমতা-সরকারের। আগামী আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই টালা সেতু (Tala Bridge) নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। দ্রুতগতিতে চলছে সেতু সংস্কারের কাজ। শুক্রবার এই সেতুর কাজ পরিদর্শন করতে এলেন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং স্থানীয় বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ সেতুটির সংস্কারের অবস্থা খতিয়ে দেখেন।
পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, প্রায় ৪৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি সংস্কার এবং নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলের তরফে কোথায় কোথায় জটিলতা ছিল, কোথায় কোথায় কাজ এখন থমকে রয়েছে বা কোথায় কোথায় সংস্কার দ্রুত হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে সেতুটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া যাবে এইসব বিষয় নিয়ে সেতুর নির্মাণকারী সংস্থা সঙ্গে বৈঠক করেন অতীন ও মলয়রা।
এরপরই রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, আগামী ৩ মাসের মধ্যে টালা সেতু সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতি এবং রেলের তরফে অনুমোদিত হতে দেরি হওয়ায় কাজ থমকে ছিল। কিন্তু এখন দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। যা আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপরেই সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে টালা ব্রিজ।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টালা সেতুতে যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কিছু দিন পরই ওই সেতু ভাঙার কাজ শুরু হয়। উত্তর কলকাতার ওই গুরুত্বপূর্ণ সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জানা গিয়েছিল, তার র্জীর্ণ অবস্থার কথা। তার পরেই রেলের সঙ্গে আলোচনার পর সেতুটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেতু ভেঙে নতুন করে তৈরি করার পরামর্শ আগেই দেওয়া হয়েছিল। নবান্নে রিপোর্ট দিয়েছিলেন মুম্বইয়ের সেতু বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়না। টালা সেতুর হাল পরীক্ষা করে তৎকালীন মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন রায়না। সেটা ২০১৯-এর অক্টোবর। মুখ্যসচিবের কাছে জমা দেওয়া যা খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে।
সেতুটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা। তবে তৈরি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ মিটার। মোট পাঁচটি অংশের মধ্যে অন্যান্য অংশ নির্মাণের প্রয়োজনীয় নকশা দেখে ছাড়পত্র আগেই মিলেছিল। তবে রেললাইনের উপরের অংশের নির্মাণকাজের জন্য অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি থমকে ছিল। প্রায় সাড়ে সাতশো মিটার দীর্ঘ সেতুটি ১২টি স্তম্ভের উপরে তৈরি হচ্ছে। যার প্রায় ২৪০ মিটার অংশ রেলপথের উপরে তৈরি হওয়ার কথা। চার লেনের নতুন সেতুর দু’দিকে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করতে রেলের জমিতে থাকা ৩৮টি আবাসন ভাঙতে হয়েছে। রেললাইন এড়িয়ে কোথায়, কী ভাবে স্তম্ভ তৈরি করা হবে, তা নিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা আলোচনা করেন এবং যাবতীয় জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু করেন।
সেই কাজ প্রায় শেষ। গত অক্টোবরে সেতুর একটি অংশের নির্মাণে ছাড়পত্র মিলেছিল। সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা রাজ্য পূর্ত দফতর গত ডিসেম্বরের ৬ তারিখ রেললাইনের উপরের অংশের নকশা, নির্মাণ পরিকল্পনা-সহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেলের কাছে অনুমতি চায়। রেল ওই তথ্য খতিয়ে দেখে গত ৭ ডিসেম্বর কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির হাতে তুলে দেয়। কমিশনার ছাড়পত্র দিতেই বাকি কাজে আর বাধা নেই। শীঘ্রই এই সেতুর কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য পূর্ত দফতর।