কলকাতা : হাতে সেঞ্চুরি থাকতে থাকতে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া ভাল। রবিবারই নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এমনটা বলেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তাপস রায়। গাভাসকারের উদাহরণ দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার ফের দিলেন সেই গাভাসকারের উদাহরণই। এ দিন তিনি বলেন, ‘সময় মতো অবসর না নিলে অনেক সময় সিলেক্টররা বাদ দেন।’ তিনি যে গাভাসকারের ভক্ত, তা তাঁর বাড়িতে রাখা ছবি দেখেই বেশ বোঝা যায়। তবে দীর্ঘদিনের রাজনীতিক হঠাৎ এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য কেন করছেন, তা স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে যে দলেরও অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছে, তা বেশ স্পষ্ট।
এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাপস রায় ফের একবার অবসরের প্রসঙ্গ টানলেন। রবিবার বরানগরের বিধায়ক, তাঁর বিধানসভা এলাকার একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আর কয়েকটা বছর হয়ত… বেশিদিন রাজনৈতিক কর্মী থাকার ইচ্ছাও নেই। থাকবও না।’ শুধু তাই নয়, তাঁকে এও বলতে শোনা গিয়েছে, আমাকে ধরে রাখা খুব কঠিন। দলকে শুধু জানানোর বিষয়, তা দলকে জানিয়ে দেব ঠিক সময় মতো। খুব শীঘ্রই।’
অবসর প্রসঙ্গে তাঁর মত, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরও নির্দিষ্ট বয়সে অবসর নেওয়া উচিত। সেই অবসরের বয়সসীমা কত হবে, তা নিয়ে সব দলগুলির আলোচনায় বসা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বিধানসভার উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, ‘শরীর না দিলে রাজনীতি করা উচিত না।’ তাই নির্দিষ্ট বয়সের পর তিনি রাজনীতি ছাড়তে চান বলে দাবি করেছেন।
সম্প্রতি তৃণমূলের অন্দরে সাংগঠনিক রদবদল হয়। উত্তর কলকাতার সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাপস রায়কে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, গুরুত্বপূর্ণ কোনও দফতরের মন্ত্রী করা হবে বলেই তাপসকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্ত পরে দেখা যায়, মন্ত্রিত্ব পাননি দলের দীর্ঘদিনের বিধায়ক তাপস। বয়সের সীমা টেনে কী ইঙ্গিত দিতে চাইছেন তাপস? সেই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি তিনি।
অন্যদিকে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়েও মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, সে সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। শিক্ষকরাও নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে পারেননি, আর ছাত্ররাও নিজেদের সে ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বর্তমানে যখন শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি, গারদে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, তখন তাপস রায়েই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি শমিক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘তাপস রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। বরানগর থেকে পদত্যাগ করে দেখান।’ তবে তাপস রায়ের এমন মন্তব্যে যে দল কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন, তা পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথা থেকেই স্পষ্ট। তিনি এ দিন বলেন, ‘তাপস ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে কথা বলতে হবে। কেন বলছে, কী জন্য বলেছে. না জেনে বলব না।’