কলকাতা: কলকাতার বুকে প্রতিদিন চুরি হয়ে যাচ্ছে গ্য়ালন-গ্যালন জল। হাজার হাজার টাকায় তা বিক্রি হচ্ছে। পুরোটাই চলছে বেআইনি ভাবে। দলের কর্মীর বিরুদ্ধে পুরসভায় নালিশ ঠুকেছেন এক কাউন্সিলর। বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অধীনস্থ স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (এস ডাবলু আই ডি বা সুইড) কোনও অনুমতি ছাড়াই যন্ত্র বসিয়ে ভূগর্ভ থেকে জল তুলে বোতলে ভরে বিক্রি চলছে অবাধে।কলকাতা পৌরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত শিয়ালদহ নর্থ রোডের হাজিপাড়ায় বছরের পর বছর চলছিল এই কারবার। দলেরই কর্মীদের এই অবৈধ কারবারের বিষয়টি নজরে আনেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলার শচীন সিং। কলকাতা পৌরসভার মাসিক অধিবেশনে মেয়রের নজরে বিষয়টি এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাউন্সিলর।
অধিবেশন কক্ষে প্রকাশ্যে বলেন, “বারবার করে অবৈধ কারবারের কথা মেয়রের নজরে আনা হয়েছে। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু কোনও অদৃশ্য শক্তি ওই বেআইনি কারবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধা দিচ্ছে।” ঘুরিয়ে তিনি দলেরই উত্তর কলকাতার একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে সচিন সিং বলেন, “আমি জানি এটা বেআইনি। এর পিছনে যে আছে সে মাফিয়া। তার নাম লতিফ খান ও পাপ্পু খান। এই জল তো পরীক্ষা করা হয়নি। জল খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে কাউন্সিলরকেই তো ধরবে।”
মেয়র কার্যত অস্বস্তিতে পড়ে জানান, “পুরসভার কমিশনার পদাধিকার বলে সুইড- এর চেয়ারম্যান। তাকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার। এভাবে শহরের বুকে বেআইনি কারবার চলতে পারে না।”
যে সব জায়গায় এই বেআইনি কারবার চলছিল, সেই এলাকায় গিয়ে জানা গেল, ৩০০ ফুট নিচ থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে জল তুলে তা ২০ লিটারের বোতলে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। দৈনিক প্রায় ২০০-২৫০ বোতল বিক্রি চলে। অথচ শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স এবং ক্ষুদ্র এবং শিল্প দফতরের অনুমোদন ছাড়া পর্যাপ্ত অনুমোদন নেই মালিকের কাছে।
এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত লতিফ খান ওরফে পাপ্পু খানের মালিকানায় এই কাজ গত সাত বছর ধরে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে বলে অভিযোগ। অথচ এই কারবার সম্পর্কে কলকাতা পুরসভা জানে না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার কাউন্সিলর।
যদিও পাল্টা তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে একাধিক অবৈধ কার্যকলাপের অভিযোগ এনেছেন ওই কারবারের মালিক পক্ষের লোকজন। তাঁদের আবার দাবি, কাটমানি না মেলায় মিথ্যে অভিযোগ করছেন কাউন্সিলর। অভিযুক্ত কারবারের অন্যতম মালিক হায়দার নওয়াজ বলেন, “সুইডের ছাড়পত্র ছাড়া এই জলের পিছনে সব ছাড়পত্র রয়েছে। পৌরসভার সার্টিফিকেট রয়েছে। আর সচিন সিং নিজে বেআইনি কারবারের মালিক।”