কলকাতা : বিজেপি বিরোধী মহাজোট শেষ পর্যন্ত প্রহসনে পরিণত হবে না তো? যত দিন যাচ্ছে এই প্রশ্নটা ততই জোরদার হচ্ছে। কেন? কারণ একটাই। তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে সোনিয়া গান্ধীর দলকে একের পর এক বক্রোক্তি শানিয়ে যাচ্ছে, তাতে আদৌ জোট তৈরি হবে তো? তার উপর আবার কংগ্রেস থেকে নেতা ভাঙিয়ে নিয়ে আসছেন তৃণমূল নেত্রী। এভাবে চলতে থাকলে, মমতার সাধের বিজেপি বিরোধী জোট কতদূর সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই।
গোয়ার কংগ্রেস নেতা তথা সেখানকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরিও আজ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনি একা নন, সঙ্গে তাঁর অনুগামীদেরও কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে নিয়ে এসেছেন। আর এরই মধ্যে আজ তৃণমূলের সাংবাদিক বৈঠকে শুনতে পাওয়া যায়, জোড়াফুল শিবির রাস্তার লড়াইয়ে আছে। আর কংগ্রেস আছে শুধুই সোশ্যাল মিডিয়ায়, ঠাণ্ডা ঘরে। বিজেপি বিরোধী মহাজোট ‘ইউনাইটেড কংগ্রেসে’র নেতৃত্বে যে মমতাই থাকবেন, তাও আজ স্পষ্ট করে দেওয়া হয় দলের সাংবাদিক বৈঠকে।
আরও একধাপ এগিয়ে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের প্রতি তামাশার সুরে বলেন, “তৃণমূল আর কংগ্রেসের পার্থক্য হল, আমরা সাত বছর ধরে বিজেপিকে হারিয়েছি। আর কংগ্রেস শুধুই হেরেছে।”
এবারের বিধানসভা ভোটে রাজ্যে জয়ের হ্যাট্রিক করার পর মমতার পাখির চোখ এখন দিল্লির মসনদ। সর্বভারতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ছে দলের। জাতীয় স্তরে দলের সংগঠনকে আরও মজবুত করতে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করেছেন মমতা। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরি করতে হলে, তা কি কংগ্রেসকে ছাড়া কখনও সম্ভব?
সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলায় তৃণমূলকে ‘সমুদ্র’, এবং কংগ্রেসকে ‘পচাডোবা’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। মুখপত্রের সম্পাদকীয়র ছত্রে ছত্রে তৃণমূল বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে, জাতীয় স্তরে যে ভূমিকা এই মুহূর্তে কংগ্রেসের নেওয়ার কথা, তা আসলে তৃণমূলই নিয়েছে।
কংগ্রেস যদি ‘আত্মবিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সমস্যা’ উপলব্ধি না করতে পারে, তবে ২০২৪ সালেও ১৯ এবং ১৪ সালের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা যে পুরোদস্তুর, সেটা বুঝতে বাকি নেই তৃণমূলের। তাই কংগ্রেস না বুঝলে তৃণমূলই সেই ভূমিকা নেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে শাসকদলের মুখপাত্র। সম্পাদকীয়র একেবারে শেষ লাইনে লেখা হয়েছে, “কংগ্রেসকে সম্মান দিয়েও আমাদের রণকৌশল আমাদেরই ঠিক করতে হবে।” অর্থাৎ তৃণমূলের বার্তা সাফ, চব্বিশের প্রস্তাবিত বিরোধী জোট কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে হবে না ঠিকই, কিন্তু সিদ্ধান্তের ব্যাটন সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই থাকবে।
যদিও কংগ্রেস তৃণমূলের এই ইচ্ছাকে কতটা গুরুত্ব দেবে সেই নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এখনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে মমতার কট্টর সমালোচক অধীর চৌধুরীই রয়েছেন।
আরও পড়ুন : Ex-Goa CM Joins TMC: সদলবলে তৃণমূলে যোগ দিলেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরিও