কলকাতা: অবশেষে ‘মোহভঙ্গ’। বিজেপি ছেড়ে ফের ঘাসফুল শিবিরে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। আগরতলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তৃণমূলে যোগ দিলেন রাজীব। তাঁর প্রত্যাবর্তনে ইতিমধ্যেই শাসক-বিরোধী শিবিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। একদিকে, যখন রাজীবের ‘ঘরওয়াপসি’-কে ‘দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত’ বলেই কার্যত দায় সারছে তৃণমূল। পাল্টা তোপ দেগেছে পদ্ম শিবির। চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং (Arjun Singh)। ‘শুভবুদ্ধি’ বলেই দাবি বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)।
বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রতের কথায়, “যাক, ছেলের শুভবুদ্ধি হয়েছে। রাজীব ভাল ছেলে। শুভবুদ্ধি হয়েছে তাই দলে ফিরেছে।” তাহলে কি ভবিষ্যতে রাজীব ও কেষ্ট মণ্ডলকে একসঙ্গে মঞ্চে দেখা যেতে পারে? সে প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে তৃণমূল নেতার মন্তব্য, “আমি গ্রামেগঞ্জের নেতা। আমার এত বড় বড় ব্যাপার নেই। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানি। ববি হাকিমদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা যা বলেন আমি তাই করি।”
অন্যদিকে, তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও রাজীবের প্রত্যাবর্তনকে বিশেষ ভাল চোখে দেখছেন না। তাঁর মতে, একজন ‘টপ টু বটম করাপ্ট নেতাকে’ দলে নেওয়া উচিত হয়নি। যদিও, পাল্টা বিজেপি শিবিরের দাবি, রাজীবের তৃণমূলে যাওয়াতে কোনও দলে কোনও প্রভাব পড়বে না।
ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের কথায়, “রাজীব তো ৫৫ বছরের শিশু। তাই বিজেপি ওঁকে ভুল বুঝিয়ে দলে টানতে পেরেছিল। ওঁকে দলে এনেছিল। ওঁ তো কিছুই বোঝেননি। আসলে এখানে ফায়দা না পেয়ে তৃণমূলে ফিরেছে। বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে বসে কাজ করবে। এতে বিজপির কোনও ক্ষতি হবে না। আর ত্রিপুরায় তৃণমূল কোথায় আর বিজেপি কোথায় সেটা সবাই জানে। সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। ”
রবিবার, আগরতলায় অভিষেকের সভামঞ্চে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সেখান থেকে ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেন, “আজকে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যিনি আবার তাঁর ঘরে ফেরানোর জন্য আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। আমি প্রণাম ও সম্মান জানাই নেত্রীকে। আমি ভুল করেছিলাম। স্বীকার করছি আমি ভুল করেছিলাম। একটা অভিমানে, জেদের বশে, রাগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেদিনও আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানা করেছিলেন। তাই আজ বলতে দ্বিধা নেই। অভিষেক আমাকে আধঘণ্টা ধরে বুঝিয়েছিলেন। আমি লজ্জিত এবং অনুতপ্ত।”
এর পর বিজেপিকে নিশানা করে রাজীব বলেন, “তখনও বলেছিলাম মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তখন আমাকেও ‘রোজি স্বপ্ন’ দেখানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল মানুষের জন্য করা করতে চাইলে ভারতীয় জনতা পার্টি করবেন। নানারকম কথা বলা হয়েছিল। আমি সত্যি যখন দলে ঢুকেছি দলে তখন অনেক উন্নয়ন, শিল্পের কথা বলা হয়েছিল। আমি যে ভুল করেছি, চাই না সারা ভারতবর্ষের মানুষ ওই ভুলটা করুক। আর যেন কেউ ভারতীয় জনতা পার্টি না করে সেটা বলার জন্য মঞ্চে মাইকটা নিয়েছি।”
এখানেই শেষ নয়। রাজীব যোগ করেন, “সবকা সাথ সবকা বিকাশের কথা বলা হয়েছিল। আজ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাহস থাকলে বুকে হাত দিয়ে বলুন, আমি বলেছিলাম দ্রব্যমূল্য হ্রাস করতে হবে। পেট্রল ও ডিজেল ও গ্যাসের দাম কমাতে হবে। খালি বলেছিল হচ্ছে, হবে…”। ভোট আর ক্ষমতা দখল ছাড়া বিজেপির কোনও এজেন্ডা নেই বলে মন্তব্য গত জানুয়ারিতে চাটার্ড ফ্ল্যাইটে গিয়ে গেরুয়া পতাকা তুলে নেওয়া রাজীবের।
আরও পড়ুন: Kalyan Banerjee: ‘কেউ কথা রাখেনি!…আমায় মেনে নিতে হবে’, রাজীবের প্রত্যাবর্তনে ‘অভিমানী’ কল্যাণ