কলকাতা: গত ১২ জানুয়ারি সাতসকালে ইডি হানা দেয় তাপস রায়ের বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাড়িতে। এরপর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল এই তৃণমূল বিধায়কের। ঠিক ২ মাসের মাথায় আজ ৪ মার্চ তৃণমূলের সঙ্গে দু’দশকের সম্পর্কে পড়ল ছেদ। তৃণমূল ছাড়লেন বরানগরের বিধায়ক। দল ছাড়ার পাশাপাশি ইস্তফা দিলেন বিধায়ক পদ থেকেও। তৃণমূল ছাড়ার কারণ হিসাবে তাপস দেখালেন সন্দেশখালি, বিভিন্ন দুর্নীতি এবং তাঁর বাড়িতে ইডি হানার পর একবারও দলের তাঁর পাশে না দাঁড়ানো। এক রাশ অভিমান তাপসের গলায়। শোনা যাচ্ছে দিন দু’য়েকের মধ্যে রাজনীতির নতুন ইনিংসও শুরু করতে চলেছেন তিনি। এ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলই সদ্য শাসকশিবির ছাড়া নেতার আশ্রয় হতে চলেছে বলে খবর। যদিও তাপস রায়কে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। যদিও সকলেই জানেন, গোপন কথাটি খুব বেশিদিন গোপন থাকে না।
তাপস রায় উত্তর ২৪ পরগনার বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক। শাসকদলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা তাপস রায়ের রাজনীতির ইনিংস দীর্ঘ সময়ের। কংগ্রেসি ছাত্র রাজনীতি করতেন। সোমেন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি ছিল তাপসের। এরপর তৃণমূলে। নয় নয় করে ২৩-২৪ বছর থেকেছেন। সেই বন্ধনও এবার ছিন্ন হল।
শাসকদলের একের পর এক প্রথম সারির নেতার নামে নানা অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক বছরে। দুর্নীতির অভিযোগে জেলেও আছেন প্রাক্তন মন্ত্রীরা। কিন্তু দুর্নীতির ত্রিসীমানায় নাম ছিল না তাপস রায়ের। তাঁর মোট সম্পত্তি কত তা নিজেই নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে।
তাপস রায় সে সময় নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, সেখানে জানিয়েছিলেন তাঁর হাতে সেই সময় নগদ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা ছিল। স্ত্রীর হাতে ছিল নগদ ২২ হাজার ৫০০ টাকা। বরানগরের বিধায়ক হলফনামায় জানিয়েছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ৩,৫৬,২৮০ টাকা আয় ছিল, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে আয় ছিল ৪,৯১,৮৬০ টাকা। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী শুভ্রা রায়ের ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে আয় ছিল ৯,৯৭,৭৩০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১,৪৩,০৬০ টাকা।
তাপস রায়ের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেভিংস ছিল ৬,৯৩,৯৩৬ টাকা। ফিক্সড ডিপোজিটের অঙ্কটা ছিল সেই সময় ২৩,২০,৫৫৯ টাকা। পিপিএফের অঙ্ক ছিল ১৪,৫৪,৪৮৬.০০ টাকা। তাপস রায় হলফনামায় জানিয়েছিলেন, তাঁর নামে ৬০ গ্রাম সোনা আছে। সে সময় যার বাজার মূল্য ছিল ২,৮২,০০০.০০।
কলকাতার বৌবাজারে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে যে বাড়িতে বৃহস্পতিবার ইডি হানা দিয়েছে, সেই বাড়ি তাপস রায়ের স্ত্রী শুভ্রা রায়ের নামে। ২০২১ সালের হলফনামায় তেমনই উল্লেখ রয়েছে। সেই সময় তাপস রায়ের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৬,৭৯১,৪৮১.০০।