কলকাতা: স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শাসকদলের সংগঠন ছিলই। সোমবার আত্মপ্রকাশ করল তৃণমূলের আরও একটি সংগঠন। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার নেতৃত্বে গঠন হল এই সংগঠন। নাম প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন(পিএইচএ)। নতুন সংগঠন কেন করতে হল তৃণমূলকে, এদিন প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে সেই ইঙ্গিত দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা পেশায় চিকিৎসক শশী পাঁজা। আরজি কর আন্দোলনে বিরোধীদের ঠিকভাবে মোকাবিলা করা যায়নি বলে মন্তব্য করলেন।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তৃণমূলের নতুন সংগঠন গড়ার খবর সামনে আসার পরই আলোচনা শুরু হয়েছিল, কেন হঠাৎ নতুন সংগঠন? কারণ, প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন নামে তৃণমূলের একটি চিকিৎসক সংগঠন রয়েছে। আরজি কর কাণ্ডের জেরেই নতুন সংগঠন গড়া হচ্ছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কারণ, আরজি কর কাণ্ডের সময় শাসকদল অস্বস্তিতে পড়লেও তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন তার মোকাবিলায় কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে মনে করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিন শশী পাঁজার মন্তব্যে সেটাই স্পষ্ট হল। নতুন সংগঠনের নেতৃত্বে দেবেন তিনিই।
আরজি করে ঘটনার নিন্দা করে শশী পাঁজা বলেন, “আরজি করের ঘটনা নিন্দনীয়। তবে আরজি করের ঘটনায় অনেক বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছিল, যা শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় সেটা মোকাবিলা করা যায়নি। রাজ্য সরকার কাজ করেছে। সেগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই ধরনের পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে চাই।” তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করছেন, তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন সংগঠন গড়া হচ্ছে। বিরোধীদের বুঝিয়ে দিতে হবে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কী কী হয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠকে শশী পাঁজা বলেন, সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি, ধর্মঘট, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের মোকাবিলা করবে পিএইচএ। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এলেও পরিদর্শনে যাবে। তৃণমূলের আগের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন পিএইচএ-র সঙ্গে মিশে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে জানান, স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি যোগাযোগ রাখবে তৃণমূলের নতুন সংগঠন। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা যদি তৃণমূলের নতুন সংগঠনে যোগ দিতে চান তাহলে কি নেওয়া হবে? শশী পাঁজা বললেন, “উন্নয়নে বিশ্বাস করলে অবশ্যই নেওয়া হবে।” পিএইচএ-র প্রথম একজিকিউটিভ বডির মিটিং হবে ৮ ফেব্রুয়ারি।
এদিন তৃণমূলের নতুন এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশের মঞ্চে দেখা গেল না সুদীপ্ত রায়, সুশান্ত রায়দের। বিরোধীদের বক্তব্য, আরজি কর পর্বে সমালোচনার মুখে পড়া চিকিৎসক নেতাদের আড়ালে রেখেই নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। বিরোধীদের কটাক্ষ, পিএইচএ আদতে উত্তরবঙ্গ লবির নতুন সংস্করণ।
মঞ্চে পরিচয় পর্বেও বেশিরভাগই ডাক্তারই উত্তরবঙ্গের। মালদহের মেডিক্যাল অফিসার, দক্ষিণ দিনাজপুরের সিএমওএইচ, জলপাইগুড়ির স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দেখা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে সরাসরি যোগ মানে কি বদলি, পদোন্নতির নিয়ন্ত্রক শক্তি হবে এই সংগঠন? তাৎপর্যপূর্ণভাবে, শশী পাঁজা স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে সরাসরি যোগ থাকবে বলার সময় মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেবাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়ে এদিন শশী পাঁজা বলেন, “আমরা বিধায়করাও এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকি। সেবাশ্রয়ও তেমনই একটা কর্মসূচি। বিতর্ক কিছু নেই।” জুনিয়র ডাক্তার আসফাকুল্লা নাইয়া ও কিঞ্জল নন্দকে হেনস্থা করতে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল পদক্ষেপ করছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে শশী পাঁজা বলেন, “চিঠি এলে চিঠির উত্তর দিয়ে দাও। ফিনিশ।” তাঁর কথায়, “ডাক্তারদের অপছন্দ করছি তা নয়। আমরা কষ্ট পেয়েছি পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায়।”