কলকাতা: বিধানসভার (Bidhan Sava)-র মধ্যে সব্যসাচী দত্ত (Sabyasachi Dutta)-র তৃণমূলের পতাকা তুলে নিয়ে যোগদানকে ‘নজিরববিহীন,’ ‘বিরল’ বলে বর্ণনা করেছেন বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। এ নিয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ, রাজ্যপালের কাছে তাঁরা দরবার করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের দাবি, বিধানসভাকে পার্টি অফিস বানিয়েছে তৃণমূল।বিধানসভায় এ নিয়ে বিক্ষোভের পর জনস্বার্থ মামলারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু। আর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন প্রবীণ রাজনীতিক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। তৃণমূল নেতা ছাড়াও এ নিয়ে মন্তব্য করলেন স্বয়ং বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee)।
ঠিক কী বলছেন তাঁরা? তাঁদের চোখে বিধানসভার মধ্যে দলীয় পতাকা নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলে যোগদান কি আইনসঙ্গত? এতে কি কোনও রীতি ভঙ্গ হয়েছে?
বিধানসভার অধ্যক্ষের বক্তব্য, “ওঁদের (পড়ুন শুভেন্দু অধিকারী বা বিধানসভায় বিরোধী) ঘরেও তো প্রচুর বাইরের লোক আসে। যেদিন ওঁদের সভাপতি (রাজ্য) এসেছিলেন, সেদিনও বাইরের লোক ছিল। আমার কাছে মার্শাল কমপ্লেন করেছিলেন, আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।” যদিও পরে তিনি এও বলেন, ‘সব্যসাচী প্রাক্তন বিধায়ক। তিনি আসতেই পারেন। তাতে ক্ষতি নেই। তবে পতাকা হাতে তোলার বিষয় না হলে ভাল হত।’ তিনি এও জানাচ্ছেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি আসার দিন বাইরে কারা এসেছিলেন, তা খতিয়ে দেখতে রিপোর্ট চেয়েছেন। ওইদিন বাইরের লোকেরা বিধানসভার নিরাপত্তা রক্ষী ও কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন বলে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগে জমা পড়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।
এদিকে এ বিষয়ে পাল্টা দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের কারও হাতে তো পতাকা ছিল না। আর যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা তো গেট পাস নিয়েই এসেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে অন্যদিকের ঘোরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” পাশাপাশি বিধানসভার অধ্যক্ষের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক বলছেন, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তো অনেক ‘বাইরের লোক’ ছিলেন। তাঁরা কারা?
বিধানসভার মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফের তৃণমূলে যোগ দেন প্রাক্তন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। যার প্রেক্ষিতে শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, “তৃণমূলেও যদি কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নেতা থাকেন, যিনি নিজেকে কর্মচারী মনে করেন না, রাজনৈতিক কর্মী মনে করেন, তাঁদেরও বলব এর প্রতিবাদ করার দরকার আছে।”
এদিকে তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বিধানসভায় যোগদান করলে কোনও মহাভারত অশুদ্ধ হয় না। তার চেয়ে অনেক খারাপ কথা বিধানসভায় হয়।” তিনি বলেন, “আমি ৫০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। বিধানসভারও অনেক দিনের সদস্য। বিধানসভার ভিতরে পতাকা নিয়ে যোগদান করলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়? বিধানসভার রীতিনীতিতে তা কি বারণ করা হয়েছে? আমার তো জানা নেই।” পাশাপাশি, তাঁর সংযুক্তি, “বিধানসভায় এর চেয়ে অনেক খারাপ কথা বলা হয়, যা পরিহার করা উচিত।”
তৃণমূল নেতৃত্ব এই বিষয়টিতে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, বিধানসভার কোনও রীতিনীতি লঙ্ঘিত হয়নি। বিধানসভার ভিতরে দলীয় পতাকা ব্যবহার করা যায় কি? এই মর্মে আবার আগামী ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট খোলার পরেই জনস্বার্থ মামলা করতে চলেছেন বিজেপির এক বিধায়ক। সবমিলিয়ে শাসক দল বনাম বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নয়া সঙ্ঘাত শুরু হল সব্যসাচীর তৃণমূলে যোগদান পর্ব দিয়ে।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘বিধানসভা তো তৃণমূলের পার্টি অফিস নয়!’ শেষ দেখে ছাড়ার হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর